নিউজ ডেস্ক | শুক্রবার,২৮ জুন ২০১৯:
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সদ্যঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তা দীর্ঘ দেড় মাসেও ব্যর্থ হওয়ায় চার দফা দাবিতে এবার আমরণ অনশনে বসেছেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুর ২টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের রাজু ভাস্কর্যে আমরণ অনশন শুরু করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের এ অংশ।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি মানতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া অংশের সদস্যরা। তবে এই সময়ের মধ্যে দাবির পক্ষে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় আজ তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক ও ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘টানা ১মাস তিনদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পরও আমরা কোনো আশ্বাস পায়নি। এজন্য এখন বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসলাম। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলবে ইনশাল্লাহ।’
এছাড়া তিনি জানান, পদ প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া প্রায় ৩৫ জন নেতাকর্মী এতে অংশ নেবেন। কমিটিকে কলঙ্কমুক্ত করা একমাত্র লক্ষ্য বলেও তিনি বলেন।
তাদের চার দফা দাবিগুলো হলো- আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ; ছাত্রলীগের কমিটির যে ১৯ জন বিতর্কিত নেতার পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে তাদের নাম ও পদের নাম প্রকাশ, কমিটিতে যত বিতর্কিত রয়েছে সবার পদ শূন্য ঘোষণা; পদবঞ্চিতদের মধ্য যোগ্যতার ভিত্তিতে শূন্য হওয়া পদগুলোতে পদায়ন এবং মধুর ক্যানটিন ও টিএসসিতে হামলার সুষ্ঠু বিচার।
এসময় তাদের ১৫-২০ জনের একটি দলকে রাজু ভাস্কর্যে অনশনে বসতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, বিগত কমিটির উপ-দফতর সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম, কবি জসিম উদ্দিন হলের সভাপতি সাহেদ খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত।
প্রসঙ্গত, এর আগে সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে তা পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া ও পদবঞ্চিত নেতারা।
তারা অভিযোগ করেন, বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবী ও বিভিন্ন মামলার আসামিসহ নানা অভিযুক্ত অনেককে পদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বঞ্চিত করা হয়েছে অনেক ত্যাগী নেতাকে।
এনিয়ে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে মারামারিও বাঁধে কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের। এরপর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার এক পর্যায়ে আশ্বাসে পিছু হটে বিক্ষুব্ধরা।
বিক্ষুব্ধদের আন্দোলনের মুখে গত ১৯ মে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিতর্কিত ১৭ জনের নাম প্রকাশ করেন এবং তাদের নির্দোষ প্রমাণেরও সুযোগ দেন। এদিকে গত ২৮ মে বিদ্রোহীদের তোপের মুখে বিতর্কিত ১৯ টি পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেটাকে শুভংকরের ফাঁকি বলে ঘোষণা দেন তারা।
এরপর ২৯ মে পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা হলে ফের অবস্থানে ফেরে বিক্ষুব্ধরা; তাদের দাবি, আগে বিতর্কিত সবাইকে সরাতে হবে, তারপরই যেন কর্মসূচি নেয়া হয়।
২৬ মে রাত থেকেই রোদ-বৃষ্টির মধ্যেও তারা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবি মানা না হলে ঈদ পেরিয়েও অবস্থান ধরে রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। ঠিক ৫ জুন ইদের দিনেও তাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকে। এক মাস তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো আশ্বাস না পেয়ে আজ আমরণ অনশনে বসেছেন নেতাকর্মীরা।