নিউজ ডেস্ক | বৃহস্পতিবার,২২ আগস্ট ২০১৯:
৯ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়লো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) থেকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে পাঠানোর কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও একজন রোহিঙ্গাও স্বদেশে ফিরতে রাজি হননি। এর আগে গেল বছরের ১৫ নভেম্বরও রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার অনাগ্রহ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ভেস্তে দিয়েছিল।
সেনা নিপীড়নের মুখে প্রাণ ও মানের ভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে রাখাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নাগরিকত্বসহ ৪টি শর্ত দিয়েছেন। আর এই শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা একজনও মিয়ানমারে ফিরতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে টেকনাফের নয়াবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও আরকানা রোহিঙ্গা সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ উল্লাহ এসব শর্তের কথা তুলে ধরেন।
সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘সর্বপ্রথম মিয়ানমারে আমাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে নাগরিকত্ব দেয়া; জমিজমা ও ভিটেমাটি দখলমুক্ত করা এবং সেদেশে ক্যাম্পে যে ১ লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা আটকে রাখা হয়েছে তাদের নিজগৃহে ফেরার সুযোগ দিতে হবে।’
এই ৪ শর্ত মানলে রোহিঙ্গারা যেকোনও সময় মিয়ানমারে ফেরত যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শর্ত পূরণ হলে প্রয়োজনে আমরা আজই মিয়ানমারে ফিরে যাব। আমরা সব সময়ই ফিরে যেতে রাজি। কিন্তু শর্ত না মানলে একজন রোহিঙ্গাও ফিরবে না।’
তার উত্থাপিত এই চার শর্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ৯০ ভাগ রোহিঙ্গার দাবি বলেও জানান সৈয়দ উল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে চারটি ক্যাম্পের দলনেতা, ইমাম ও সোসাইটির সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও ক্যাম্পের চেয়ারম্যানরা ছিলেন না।
এদিকে তারিখ পূর্বনির্ধারিত থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের শালবাগান ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের সামনে অপেক্ষা করতে দেখা যায় ৫টি মাইক্রোবাস, ৩টি বাস ও ২ ট্রাক ও লেদা ক্যাম্পের পাশে আরও ২টি বাস।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দিন নির্ধারিত থাকায় এদিন সকাল থেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য উপস্থিতি ছিলেন।
তবে রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছা ও অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায়ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি।
এরপর দুপুর ১২টার দিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাক্ষাৎকার দেয়া রোহিঙ্গাদের কেউই মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি নন। শর্ত পূরণ হলে তবেই তারা দেশে ফিরবেন।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনা কর্তৃক নিপীড়ন, জ্বালাও-পোড়াও, গণহত্যা ও গণধর্ষণের মুখে সাগর ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নতুন করে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে বর্তমানে সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।