নিউজ ডেস্ক | বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯:
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মহাসড়কে এখনই টোলের প্রবর্তনের বিষয়টিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, টাকা আদায় বা টাকার সংস্থান করার চেয়ে বেশি জরুরি মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণে অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। দেশে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির যে বিস্তার তাতে এই ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্র কতটা উপকৃত হবে তা নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করছেন অনেকে। মহাসড়কে টোল আদায় শুরু হলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে বিড়ম্বনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও বড় বড় মহাসড়ক যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ এসব মহাসড়কে টোলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কেবল তা-ই নয়, টোলের মাধ্যমে আদায় করা টাকার জন্য একটি আলাদা ব্যাংক হিসাব করতে হবে। সেই টাকা দিয়ে মহাসড়কগুলো সংস্কার করা যাবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে সেতু পারাপার ও কয়েকটি উড়াল সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে টোল আদায়ের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মহাসড়কে টোল আদায়ের নতুন ব্যবস্থা চালু করতে যাওয়ার পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘মহাসড়ক বলতে আমরা জাতীয় মহাসড়কগুলোকে বুঝিয়েছি, ছোট সড়কগুলো নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-ময়মনসিংহের মতো সড়কগুলো। তিনি বলেন, এতদিন আমরা শুধু কয়েকটি নির্বাচিত সেতুতে টোল নিতাম। কিন্তু রাস্তাঘাট মেরামতে আমাদের বহু টাকার প্রয়োজন হয়। তাই টোল নিয়ে যদি আলাদা একটি ডেডিকেটেড তহবিলে রাখা যায় এবং সেই টাকাটা রাস্তা মেরামতে ব্যয় করা হবে, এটাই হচ্ছে আইডিয়া। তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আইডিয়াটার কথা জানিয়েছেন। এখন সেটা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।’
কোন কোন গাড়ির ক্ষেত্রে এ টোল কার্যকর হবে-সে বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, যারা সড়ক ব্যবহার করেন, যাওয়া-আসা করবেন, তারাই এই টোল দেবেন। যেভাবে অন্যান্য দেশে আছে, সেভাবেই এখানেও ব্যবস্থা করা হবে। সেটা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হতে পারে।’
পরিকল্পনাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান। পুরো কার্যক্রম শুরু হলে তখন এ বিষয়গুলো পরিষ্কার হবে। তখন গাড়ি প্রতি টোলের হারটিও নির্ধারণ করা হবে।
তিনি জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কে টোল আদায় করার নির্দেশনা দেন। সভার এজেন্ডায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দেশেই সড়কে একটি টোল নেওয়া হয়। সেটা আমরা দেখব, বুঝব। সেভাবেই আমাদের এখানেও ঠিক করা হবে। একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের পর পর হয়তো টোল স্টেশনগুলো হবে।’
এদিকে মহাসড়কে টোল ধার্য হলে সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, টোল হলে কি সুবিধা হবে, কি অসুবিধা হবে এসব বিষয় নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা। জনমনে এ নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও রয়েছে নানা মত।
জনজীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে : সৈয়দ আবুল মকসুদ, লেখক-বুদ্ধিজীবী
সড়কের বিশৃঙ্খল অবস্থা নিয়ে, ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মানুষ প্রতিদিন চরম উদ্বেগে রয়েছে। সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সরকারের আশু কর্তব্য। হঠাৎ করে কয়েকটি মহাসড়কে টোল বসানোর সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী নয়। এর ফলে যানবাহনের মালিক ও সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সুতরাং সব দিক বিস্তারিত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়।
আমাদের দেশে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতির যে বিস্তার তাতে এ ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্র কতটা উপকৃত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। টোল ব্যবস্থা চালু হলে জনজীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
আসল সমস্যা হচ্ছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব : ড. জায়েদ বখত, গবেষণা পরিচালক, বিআইডিএস
মহাসড়কে টোলের পদ্ধতি নতুন না, অনেক দেশে করা হয়। আমাদের দেশেও ব্রিজে এগুলো আছে, উড়াল সড়কে আছে। যেসব হাইওয়ে বাণিজ্যিকভাবে বেশি ব্যবহৃত হয়, সেটায় টোল হতে পারে। এর ভালোমন্দ দুটি দিকই আছে। একদিকে সাধারণভাবে মানুষের কস্ট অফ লিভিং (জীবনযাত্রার খরচ) বাড়বে। কারণ যানবাহনের খরচ বাড়লে ভাড়াও বাড়বে। আবার যেসব সড়ক বেশি ব্যবহৃত হয়, সেটা মেরামতের দরকারও বেশি, টোলের আয় থেকে সেটি ব্যয় নির্বাহ হবে। কিন্তু তহবিল গঠনের চেয়ে বরং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপর সরকারের বেশি নজর দেওয়া উচিত।
এটা সরকারের রাজস্ব আয়ের ভালো উৎস হতে পারে। কিন্তু সেটার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সরকারের টাকার অভাবে সড়ক মেরামত হচ্ছে না তা নয়, বরং আসল সমস্যা হচ্ছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব। টাকার ঠিকমতো ব্যবহার হচ্ছে না, রাস্তাঘাটের ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না।
-খবর দৈনিক খোলা কাগজ