নিউজ ডেস্ক | বুধবার,২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯:
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনের আগে চলমান রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সেক্রেটারিয়েট।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতিসংঘ সদর দফতরে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইব্রাহিম বিন আবদুল আজিজ আল-আসাফ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সার্বিয়া, ফিলিপাইন ও গাম্বিয়া থেকে আসা অতিথিরা।
রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলমান অধিবেশনে চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রস্তাবগুলো আমি জাতিসংঘের চলতি ৭৪তম অধিবেশনে উত্থাপন করব, সেগুলো উল্লেখ করছি। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে—
১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছা সুস্পষ্ট করতে হবে। এ জন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী করছে, সেটাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে।
২. বৈষম্যমূলক আইন ও চর্চা পরিত্যাগ করতে হবে। এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘যাও ও দেখ’—এই নীতিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।
৩. রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা দূর করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর মূল মিয়ানমারে গভীরভাবে প্রথিত। সুতরাং এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই খুঁজে পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানবিক সহায়তা ও অন্যান্য সহযোগিতা রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনগুলো সমাধান করে। তবে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে হবে, যেখানে তারা শতাব্দীর পর শতাব্দী বসবাস করে আসছিল। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো রকম সমাধান ছাড়াই আমরা আরও একটি বছর পার করে দিয়েছি। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা নৃশংস অপরাধের শিকার হচ্ছে। টেকসই, নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান কার্যক্রম অনুসরণ করছে। আমরা বিশ্বাস করি যে ওআইসি তার জবাবদিহি সম্পর্কিত অ্যাডহক মন্ত্রিপরিষদ কমিটির মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে ও তাদের দেশে ফেরত না যাওয়া অবদি সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গারা ৬ হাজার ৮০০ একরের বেশি বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে, যাতে বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।