নিউজ ডেস্ক, সোমবার,২৫ জুন ২০১৮: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের আচরণ মোটেই ইতিবাচক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
সোমবার (২৫ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সুজন আয়োজিত বৈঠক শেষে বদিউল আলম মজুমদার এ মন্তব্য করেন।
রংপুর, খুলনা বা গাজীপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনেরই ইঙ্গিত দেয় বলেও জানান তিনি।
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশন রংপুরে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে যে জনআস্থা অর্জন করেছিলেন, খুলনা নির্বাচনে তা বহুলাংশে বিসর্জন দিয়েছে। তো গাজীপুরেও কিছু কিছু ঘটেছে, যেমন কিছু গ্রেফতার হয়েছে, কিছু প্রার্থীকে পুলিশের গাড়িতে দেখা গিয়েছে, এগুলো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক নয়। তো এসব নির্বাচন যদি সঠিক না হয়, তাহলে অবশ্যই এর থেকে আমরা একটা ইঙ্গিত পাব, আগামী জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করব, যা ঘটেছে খুলনাতে, তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে গাজীপুরে।’
প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য এ বাজেট হয়নি। অল্প কিছু শ্রেণিকে তুষ্ট করার জন্য বাজেটটা হয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করে এটি একটি বড় বাজেট। কিন্তু তারা তো সবকিছু বুঝে না। একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষ এ থেকে বেশি সুবিধা পাবে। তাছাড়া বাজেটে এনালাইটিক্যাল কোনও বর্ণনাও নেই।’
দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর প্রতি দৃষ্টি ও মনোযোগ এত বেশি যে এতে মাঝারি বা ছোট প্রকল্পের আওতায় থাকা লোকগুলো কিন্তু সাফার হচ্ছে। মেগা প্রকল্পগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে, কিন্তু এসব চিন্তা করলে জনকল্যাণমুখী বাজেট এটাকে বলা যাবে না।’
বিভিন্ন প্রকল্পে সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বড় বড় প্রকল্প থেকে দুর্নীতি হচ্ছে। এখন কিন্তু দুর্নীতি ৫০০ বা হাজার টাকায় নয়, এখন দুর্নীতি হচ্ছে হাজার কোটি টাকায়।’
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে সক্ষমতা দরকার। সেই সক্ষমতা তো এখনো আমাদের নেই। সরকারি, বেসরকারি ও রেগুলেটরিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি দরকার। কিন্তু তা হয়নি। এবারের বাজেটটা তাই আলাদাভাবে চমকের কোনো বাজেট নয়। আমরা ভেবেছিলাম উন্নয়নের বাজেট হবে এবং উন্নয়নটা হবে টেকসই। সেটা দেখছি না।’
সালেহউদ্দিন আরও বলেন, ‘শিক্ষাখাতে যে বাজেট রাখা হয়েছে তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি বাজেট রাখা হয়েছে শিক্ষকদের বেতন-ভাতায়। কিন্তু শিক্ষার গুনগত মান বাড়াতে বরাদ্দ কম।’
বাজেটে সড়ক সংস্কারে বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাত্র এক বছরের মাথায় সড়ক উন্নয়নে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন যদি হয় তাহলে এক বছরের মাথায় এই বরাদ্দ কেন?’
অর্থনীতিবিদ আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘এ দেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেড়েছে। মধ্যবৃত্তরা নিম্নবৃত্ত হচ্ছে। দেশে চাহিদা অনেক বাড়ছে। কৃষিখাতে ভর্তুকি আরও বাড়ানো দরকার।’
গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গরিব মানুষের ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। আর প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ের লোকদের খুশি করা হচ্ছে। বড় বড় স্থাপনা বা কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন উন্নয়ন নয়। উন্নয়ন হচ্ছে কোনও স্থাপনা বা প্রকল্প থেকে জনগণ কতটা সুবিধা পাচ্ছে সেটা। একটি বিশেষ শেণিকে সুবিধা দেয়ার জন্যই এই বাজেট। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও সুবিধা দেবে।’
বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ও অর্থনীতিবিদ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ প্রমুখ।