নিজস্ব প্রতিবেদক, বুধবার, ১ আগষ্ট ২০১৮: মাধবদী পৌরসভা সংলগ্ন দেওয়ান হাসপাতাল (প্রা:) লিমিডেট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্রমশ: মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। এতে নতুন করে যোগ হয়েছে এক সদ্যজাত শিশু। নার্সদের অজ্ঞতায় প্রসবের সময় শিশুর মাথা ও শরীরে আঘাতের কারনে তার মৃত্যু হয়। পরে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে শিশুর পরিবারকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মালয়েশিয়া প্রবাসি নিহত শিশুর মামা নাজমুল হক মুঠোফোনে জানান, গত ২৭ জুলাই শুক্রবার দুপুরে তার বোন নাসিমার প্রসব জনিত ব্যথা উঠলে পরিবারের লোকজন মাধবদীর দেওয়ান হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। পরে ঐ হাসপাতালের নার্সদের অজ্ঞতার কারনে নাসিমার শিশুর মৃত্যু হয়। তিনি ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবী জানান।প্রবাসির অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে তাদের বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন জানান, নিহত শিশুর মা নাসিমাকে মাধবদীর দেওয়ান হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হলে, তাদের কাছ থেকে জরুরী ভিত্তিতে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও প্যাথোলজিক্যাল টেস্টের কথা বলে টাকা নেয়া হয়। কিন্তু কোন প্রকার টেস্ট ছাড়াই দুইজন নার্স ওই মহিলাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে নরমাল প্রসবের জন্য তার পেটে চাপাচাপি শুরু করে। এসময় তার স্বজনরা বাচ্চার আকার বড় হয়ে গেছে জানিয়ে প্রয়োজনে সিজার করার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত না করে কোন ডাক্তারেরও পরামর্শ না নিয়ে রোগীর জরায়ুর মুখ কেটে একরকম টেনে হিচড়ে ডেলিভারি করায়। এতে সদ্যজাত শিশুটির মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে বিদায় করা হয়। পরে শিশুটিকে নারায়নগঞ্জের প্রো অ্যাক্টিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শিশুটির পরিবারের দাবী দেওয়ান হাসপাতালের অনভিজ্ঞ নার্সদের মাধ্যমে তাদের সন্তানটিকে হত্যা করা হয়েছে। নারায়নগঞ্জ হাসপাতাল থেকে দেয়া মৃত্যুসনদেও কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত্যুর কারন হিসেবে মাথায় আঘাতের কথা উল্লেখ করেন। ভুক্তভোগী পরিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এঘটনার বিচার চাইতে এসে উল্টো রোষানলের শিকার হয়। পরে স্থানীয় কয়েক জন লোক বিষয়টি জেনে গেলে নিহত শিশুর নানা সাদেকের হাতে কিছু টাকা দিয়ে তাদের বিদাই করেন।
এব্যপারে নিহত শিশুর মা নাসিমা জানান, সংসার জীবনে এটাই ছিল তাদের প্রথম সন্তান। সন্তানটিকে ঘিরে তাদের অনেক স্বপ্ন ছিলো কিন্ত দেওয়ান হাসপাতালের নার্সদের গাফিলতিতে সদ্যজাত শিশুটিকে প্রাণ দিতে হলো।
মাধবদী শহরের লোকজন জানান, হাসপাতালটিতে প্রায়ই এধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় উক্ত হাসপাতালটি ভাংচুর করা হয়। প্রতিবারই টাকার বিনিময়ে তারা এসব ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে ফেলে।
এব্যপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে গেলে কর্তব্যরত স্টাফরা সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার করে তাদের কাজে বাধা প্রদান করে। এসময় হাসপাতালের মালিক আঃ রব দেওয়ানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি তাদের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে জনৈক মহিলা কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে আমেনা বেগম জ্যোৎস্না নামে মাধবদী পৌরসভার ওই মহিলা কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনাটি এড়িয়ে যান।
এদিকে এ বিষয়ে নরসিংদীর সিভিল সার্জন ড: ইব্রাহিম তুহিন জানান,মাধবদীর দেওয়ান হাসপাতাল’র নাম এই প্রথম শুনলাম। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।