নিউজ ডেস্ক,বুধবার,২২ আগস্ট ২০১৮:
পরিপূর্ণ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা ও ত্যাগের মহিমায় সারাদেশে পালিত হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই পবিত্র দিনে পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি খুঁজছেন মুসলমানরা।
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় দেশের প্রথম ঈদ জামাত। সকাল ৮টায় রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ নামাজ আদায় করে।
ঢাকা শহরের ৪০৯টি স্থানসহ সারাদেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজ শেষে সকল বয়সের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ কোলাকুলির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
এরপরই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক নিবিড়। সোমবার (২০ আগস্ট) মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেন।
স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করেন।
ঈদুল আজহা মুসলমান জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময়ই নবী ইব্রাহিম (আ.) এর পরীক্ষা নেন। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।
সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব।
ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে সূরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বাসহ যে কোনো হালাল পশু দিয়ে কোরবানি দেয়া যায়।
মনে রাখতে হবে, পশু কোরবানির রক্ত, মাংস কিছুই সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছায় না। নিজের মনের পশুত্বকে কোরবানি করে আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভই মূল উদ্দেশ্য কোরবানির। পশুর মাংস তিন ভাগ করে এক ভাগ গরিবদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়দের জন্য এবং অপর এক ভাগ নিজেদের জন্য রাখাই সুন্নত। ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে।