ইদ্রিস আলম
আমার স্বামী অন্ধকার কবরে একা একা শুয়ে আছে। আর খুনিরা বাহিরে আনন্দ ফুর্তি করছে ” অশ্রুশিক্ত কণ্ঠে কথাগুলো নিহত মহাখালি যুবলীগ নেতা কাজী রাশেদের স্ত্রী মৌসুমি আক্তারের। গত ১৫ জুলাই রাজধানীর মহাখালীর কথা সবাই ভুলে গেলেও নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি সেই পরিবার। যে পরিবারে বৌ হারিয়েছে স্বামী, সন্তান হারিয়েছে বাবাকে,মা হারিয়েছে ছেলেকে। সকালের সূর্য দিনকে সবে মাত্র আলোকিত করতে না করতেই নেমে আশে ঐ পরিবারে কালো মেঘের ছায়া। সেই পরিবারটির কথা বলছি। যে পরিবার হারিয়েছে সর্বোচ্চ, কেউ খোঁজ রাখেনি রাশেদের পরিবারের। রাজধানীর মহাখালীতে ১৫ জুলাই ভোর বেলা বন ভবনের পেছনে সোহেলের অফিসের পাশ থেকে রাশেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই রাশেদের পরিবার কেমন আছে জানতেই,আর মামলার বর্তমান অবস্থা জানতে ডেইলি বাংলাদেশের অনুসন্ধান। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে মামলার বর্তমান অবস্থা। রাজধানীর মহাখালীতে যুবলীগ নেতা কাজী রাশেদ হত্যার প্রধান আসামি ছিলেন বনানী থানা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ সরদার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেল। জানাজায় এক সময় পরিবারের থেকে বেশি প্রাধাণ্য দিতো রাশেদ সোহেলকে। কিন্তু সেই সোহেল নাকি কেড়ে নিলো রাশেদের প্রাণ ছোট্র সন্তানকে করলো এতিম বৌকে করে দিলো বিধবা। এখনও ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে গেল সোহেল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে আড়ালেই বসবাস করছে সোহেল। ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে তিনি। পুলিশ সূত্রে পাওয়া, হত্যার ঘটনায় তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। রাশেদ হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর জাকির হোসেন নামে এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সোহেলের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন পুলিশ। জানাযায়, জাকির আদালতে এবং তদন্ত-সংশ্নিষ্টদের বলেছেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে সোহেল তাকে মোবাইল ফোনে নিজের অফিসের সামনে আসতে বলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সেখানে এসে সোহেল, ফিরোজ, দীপু, হাসু, কাজী রাশেদসহ আরও দু-তিনজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। সোহেল ও ফিরোজ তাকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে বলেন, “আজ রাশেদকে ফালাইয়া দিমু, তুই নিচে পাহারায় থাকিস। কেউ যেন ওপরে যেতে না পারে।” রাশেদকে নিয়ে সোহেল, ফিরোজ, হাসু, দীপু ও আরও দু-তিনজন তৃতীয় তলায় সোহেলের অফিসে যান। কয়েক মিনিট পর গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সোহেল ও অপরিচিত একজন নিচে নেমে আসেন এবং তার হাতে একটি ছোট বাক্স দিয়ে তাকে চলে যেতে বলে বেরিয়ে যান তারা। এর পরপর হাসু, ফিরোজ, দীপুসহ চারজন রাশেদের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত লাশ ধরাধরি করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে আনেন এবং গেটের বাইরে ওয়ালের পাশে ফেলে দেন। মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানাযায়, গত ৮ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এই জবানবন্দি দেন জাকির। এর আগে ৭ আগস্ট তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। মামলাটি তদন্ত করছে তারা। বনানী থানা থেকে গত ২৯ জুলাই মামলাটি সেখানে স্থানান্তর করা হয় বলে জানাযায়। এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, জাকির হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্তাধীন মামলায় এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। জানাযায়, নিহত রাশেদের বাসা মহাখালীতে। বাসা নম্বর জিপি-গ/৪২। এটি তার পৈতৃক বাড়ি। স্ত্রী, সন্তান ও মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করতেন রাশেদ। সরেজমিনে গেলে একাধিক এলাকাবাসী ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, সুন্দরী সোহেলের ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। বাসায় রাতে ঘুমানোর সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় কাটাতেন তার সঙ্গে। বনানী ও মহাখালী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন সোহেল। সোহেলের ভয়ে থাকতেন সবাই। তার বাহিরে কথা বলার মত কেউ সাহস করতনা। সেই সন্ত্রাস সোহেলই রাশেদকে মেরে ফেললো। ছোট বাচ্চা এতিম হয়ে গেলো। বছরখানেক আগে তার সঙ্গ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন রাশেদ। কিন্ত সোহেল যেতে বাধা দেন তাকে। কারণ সোহেলের অনেক অপকর্মের সাক্ষী ছিলেন তিনি। এসব নিয়ে দ্বন্দ্ব বেড়ে যায় তাদের মধ্যে। হত্যারও হুমকি দেয়া হয়েছিল রাশেদকে। অবশেষে ১৪ জুলাই রাতে সোহেলের অফিসে তাকে সাতটি গুলি করে হত্যার পর লাশ পাশের গলিতে ফেলে রাখা হয়। ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন মামলার তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা। তাতে তারা দেখতে পান- হাসু, দিপু, জহুরুল ও ফিরোজ নিহত রাশেদের চার হাত-পা ধরে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। হাত পলিথিন দিয়ে জড়ানো ছিল তাদের। এই চারজন সোহেলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। ১৫ জুলাই সকালে লাশ উদ্ধারের পর রাশেদের স্ত্রী মৌসুমি আক্তার বনানী থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি ইউসুফ সরদার সোহেল। এ ছাড়া হাসু, দিপু, ফিরোজসহ অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়। এজাহার সুত্রে পাওয়া যায়, সোহেল ও রাশেদ একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। জোরপূর্বক তাকে নেশা করাতেন সোহেল। জুনের প্রথম দিকে সোহেল তাকে মারধরও করেন। একপর্যায়ে তার সঙ্গে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন রাশেদ। এরপর থেকে সোহেল হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এদিকে রাশেদ হত্যার কয়েকদিন পর ১৯ জুলাই বনানী থানা পুলিশ সোহেলের অফিস তল্লাশি করে চারটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও ১২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে পুলিশ। সোহেলসহ হত্যা মামলার আসামিরা ঘটনার পর থেকেই পলাতক। সোহেলের স্ত্রীও বাসায় নেই। মোবাইল যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, সোহেলের সঙ্গেই রয়েছেন তার স্ত্রী ও। এদিকে বর্তমান মামলার সম্পর্কে নিহত রাশেদের স্ত্রী মৌসুমি আক্তার ডেইলি বাংলাদেশ বলেন, “কান্নার সুরে বলেন, প্রায় দেড় মাস পার হয়ে গিয়েছে একজন আসামী ছাড়া কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। মেইন আসামী সোহেল তো দেশের বাহিরে যাননি তাহলে কেন ধরতে পারছেনা? কেন ধরা হচ্ছে না সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশদের সাথে তো বেশি কথা বলা যায় না। বলে একজনকে ধরেছি বাকীদের ধরার চেষ্টা চলছে। তিনি আরো বলেন, আপনারা যাচাই করেন, রাশেদ কেমন ছিলো? কিছু দিন পরপর নেশা করে রাশেদকে মারতো সোহেল বাসায় বলে না আমি স্ত্রী তাই গায়ে মারের