নিউজ ডেস্ক,বৃহস্পতিবার,১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮: ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু মামলা করেছে পুলিশ। মৃত ব্যক্তিকে ককেটল ছুঁড়তে দেখেছে বলে পুলিশ মামলা করেছে। এরকম ভুতুড়ে মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তি বা হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধকেও। বেশির ভাগ মামলার আসামি বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এরকম প্রচুর খবর প্রকাশ করছে দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে হবিগঞ্জে কেউ রাস্তায় না নামলেও সেখানে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত ৩০ জুলাই হবিগঞ্জ শহরের জে কে অ্যান্ড হাইস্কুলের সামনে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, যানবাহন ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন এবং সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছে-এমন অভিযোগে পুলিশ মোট দশটি মামলা করেছে। বিশেষ আইনে দায়ের করা এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। সেখানে বাদী হিসেবে যে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিনি নিজেই মামলা সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। এরপর তাকে ছ’মাস আগের একটি বিস্ফোরক মামরায় রিমান্ডে নেবার আবেদন করেছে পুলিশ।
এসব ‘ভুতুড়ে’ মামলার বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সারাদেশে ব্যাপকহারে ‘ভুতুড়ে’ মামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত দু’সপ্তাহে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৫শ’র বেশি মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় এক লাখের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পুরোনো মামলাগুলোও সক্রিয় করা হচ্ছে। নাশকতার পরিকল্পনা, গোপন বৈঠক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক রাখা প্রভৃতি অভিযোগ তুলে এসব আটক অভিযান চলছে।
এ প্রসঙ্গে, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলান বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ভীতির পরিবেশ তৈরির জন্য এসব গায়েবি মামলা দায়ের হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে। বিরোধী মতকে দমন ও সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে পুলিশ উৎসাহিত হয়ে এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
এদিকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান ধরপাকড় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংবিধান প্রণেতা, গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া, মানুষকে গুম করা, পুলিশের গায়েবী মামলা, হঠাৎ ধরপাকড় আতঙ্ক- এসব ঘটনা প্রমাণ করছে দেশ সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহদীন মালিক বলেছেন, এটা তো এখন স্পষ্ট যে, পুলিশের একটা বড় অংশ সরকারি দলের বাহিনী হয়ে গেছে। এই অংশ অপরাধ দমন থেকে সরকারি দল নির্বাচনে যেন জিততে পারে সেটাই তাদের মুখ্য কার্যক্রম বলে মনে হচ্ছে। এটা পুলিশের আইনগত দায়িত্বের সম্পূর্ণ বরখেলাপ। জেনেশুনে এভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করা ফৌজদারি আইনে অপরাধ।
এসব মামলার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন। তিনি বলেন, প্রথমত, এই ধরনের মামলায় ধারণা করা যায়, বিরোধী শক্তিকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে ভবিষ্যতে যাতে ব্যবহার করা যায় সেজন্য হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এসব মামলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা এবং অর্থ উপার্জনের একটা পথও খুলতে পারে। তৃতীয়ত, সমাজে এক ধরনের ভয়, ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করে রাখা। যেহেতু আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন। সেই কারণে এই মামলাগুলো হয়তো জনগণের বাক-স্বাধীনতা রহিত করার জন্য ব্যবহৃত হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে।
গত শনিবার রাজধানীতে এক মতবিনিময় সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে মামলা হচ্ছে সেগুলোর কথা একই রকমের। মনে হয় যেন ফরমেট তৈরি করে দিয়েছে, সেই ফরমেটে এজাহার তৈরি করা হয়েছে। তারা নিজেরাই কিছু ককটেল-টকটেল ফুটাচ্ছেন, ফুটিয়ে সবকিছুর অবশিষ্টাংশ নিচ্ছেন, রাস্তা থেকে কয়েকটা পাথর কুড়িয়ে নিচ্ছেন, কয়েকটা লাঠি আনছেন, বলছেন আলামত পাওয়া গেছে। আসলে সেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সূত্র: পার্সটুডে।