নিজস্ব প্রতিবেদক,শনিবার,১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮: সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ৫ মাস আগে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত রবিনের লাশ তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মাধবদীতে দাফন করা হয়েছে। শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টায় জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। এর আগের রাত ২টায় সৌদি আরব থেকে রবিনের লাশ বাংলাদেশের হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে পৌছায়। সেখান থেকে স্বজনরা বাক্সবন্দি রবিনের লাশ তাদের গ্রামের বাড়ী মাধবদীর আলগী কান্দাপাড়া গ্রামে নিয়ে আসে। এদিকে, নিহত রবিনের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে তার স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
জানা যায়, নিহত রবিন মাধবদী থানার নুরালাপুর ইউনিয়নের আলগী কান্দাপার গ্রামের ভ্যান চালক আবুল হোসেনের ছেলে। আট মাস আগে প্রায় ৬ লাখ টাকা ধার-দেনা করে বিদেশে পাড়ি জমান রবিন। তার স্বপ্ন ছিলো ঋণ পরিশোধ করে একদিন সংসারের অভাব দূর করে সবার মুখে হাসি ফুটাবে। কিন্তু সে স্বপ্ন আর বাস্তবে ধরা দিলোনা। তার মৃত্যুতে সব শেষ। একদিকে ছেলে হারানোর শোক অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তার পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম।
নিহতের পরিবার ও স্বজনরা জানান, বাবা মা ও তিন ভাই ও ১ বোনকে নিয়ে রবিনের পরিবার। সংসারের অভাব অভাব দূর করতে এনজিওসহ বিভিন্ন জনের নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা ঋন নিয়ে রিয়াদে পাড়ি জমিয়েছিলো রবিন। মারা যাওয়ার দুইদিন আগে সর্বশেষ মা রিনা বেগমের সঙ্গে তার কথা হয় । এসময় সেখানে কাজ পাওয়ায় বিলম্ব ও থাকা খাওয়ার কষ্টের কথা জানিয়েছিলো মাকে। কষ্টের পরও কাজ পাওয়ায় খুশি হয়েছিলো সে। বেতন পাওয়া শুরু করে ঋনের ৬ লাখ টাকা পরিশোধের পর সংসারের অভাব দূর করে দেবে বলে আশ্বস্ত করেছিলো রবিন। কিন্তু পরিবারের ধার-দেনা পরিশোধের আগেই তাদের স্বপ্ন আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যায়।
রবিনের মা রিনা বেগম বলেন, রবিন মারা যাওয়ার দুইদিন আগেও ছেলের সঙ্গে কথা বলে কষ্টের বিবরণ শুনেছি। এরপর ঋনের টাকার জন্য চিন্তা ভাবনা না করতে আশস্ত করেছিল সে। বলেছিল সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কিন্ত তার আগেই সে চলে গেলে আমাদের ছেড়ে। তার ধার-দেনা এখন কিভাবে পরিশোধ করবে তার বাবা। এখন সেও স্বাভাকি চলাফেরা করতে পারে না।
নিহত রবিনের বাবা আবুল হোসেন জানান, গত ১৩ এপ্রিল শুক্রবার রিয়াদের একটি ভবনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আরও ৭ বাংলাদেশীসহ রবিন মারা যায়। রবিনের লাশ দেশে আসবে কোন খবর সরকারী ভাবে জানতে পারি নাই। হঠাৎ তার বন্ধুর ফোনে বিমানবন্দর গিয়ে বাক্সবন্দি ছেলের মৃত দেহ ও ৩৫ হাজার টাকার একটি চেক পাই। পরে লাশ এনে জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তিনি আরো জানান, ছেলেটা আমাদের সুখী করতে গিয়ে চিরদু:খী করে দিলো। অভাবের সংসারে ঋনের বোঝা কিভাবে বইবো, ছেলের শোক কিভাবে সইবো? কিভাবে ঋন পরিশোধ করবো? আমার মৃত্যু ছাড়া এখন কোন উপায় নাই। তিগ্রস্ত পরিবারটির দাবী সরকার যেন এব্যপারে তাদের প্রতি সদয় হন।
এ ব্যাপারে নরসিংদী জেলা প্রবাসী কর্মসংস্থানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।