নিউজ ডেস্ক,বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮:
চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয়া নিয়ে আবারও সংঘাতে জড়িয়েছে নগর ছাত্রলীগের দুই পক্ষ। এ সময় কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবারের পর আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে চট্টগ্রাম কলেজের ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করে সিটি মেয়র আজম নাছির সমর্থিত ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। দুপুর ১টার দিকে কয়েকশ বহিরাগত এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। এক পর্যায়ে তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে।
পরে তারা সেখান থেকে মিছিল নিয়ে গণি বেকারির সামনে গেলে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি নেয়া নুরুল আজিম রনির অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরপর শুরু হয় দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ককটেল বিস্ফোরণ। পরে পুলিশ সদস্যরা লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় গণি বেকারি থেকে চকবাজার পর্যন্ত সড়ক যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষ চলাকালে পথচারী, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ কর্মীরা গণি বেকারি ও কাজেম আলী স্কুলের সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়েছে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গতকালের সংঘর্ষের জের ধরে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। পুলিশ গিয়ে দুই পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।’
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী ও ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি নেয়া নুরুল আজিম রনির অনুসারীর হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল করিমকে সভাপতি ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে প্রথমবারের মতো এই কলেজে ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।
নতুন এ কমিটি অনুমোদন দেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। তারা দুজনও মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বিক্ষোভকারীদের একজন খোরশেদ। এই ছাত্রলীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই কমিটি ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে কমিটির ৬ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো ছাত্রলীগ নেই। শিবির-ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল এমন ছাত্রদেরও কমিটিতে রাখা হয়েছে।’
তবে নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমেই এই কমিটি। কমিটি নিয়ে অভিযোগ থাকলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সময় তা সমাধান করা হবে।’
নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যাদের অবস্থান ভালো তাদের আমরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছি। শিবির-ছাত্রদল বলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারাতো ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে আসছিল। এতদিন তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।’
উল্লেখ্য, জামায়াত-শিবিরের ক্যান্টনম্যান্ট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া চট্টগ্রাম কলেজের শহীদ মিনারে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ হয়। সে সময় নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে চট্টগ্রাম কলেজে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ। এর পর থেকে কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নুরুল আজিম রনির অনুসারীদের সঙ্গে যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা ওরফে টিনু ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারীদের বিরোধ চলে আসছে।