ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসের ৫৮তম ওভারে। বল করছিলেন পিটার সিডল। থার্ড ম্যাচে বল পাঠিয়ে দিয়ে একটুখানি দৌড়েই থেমে যান আজহার। কারণ তিনি ভেবেছিলেন, বল চলে গেছে পার্শ্বরেখার বাইরে। তাই তিনি ক্রিজের মাঝ বরাবর এসে দাঁড়িয়ে পড়ে নন-স্ট্রাইকার আসাদ শফিকের সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। ওদিকে থার্ড ম্যানের ফিল্ডার মিচেল স্টার্ক দৌড়ে গিয়ে বল হাতে নিয়ে ছুঁড়ে দেন অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক টিম পেইনের দিকে। পেইন বল লুফে নিয়ে ভেঙে দেন স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প। ফলে নিতান্তই আকস্মিকভাবে ৬৪ রানেই থেমে যায় আজহারের ইনিংস।
এর পেছনে কারণ আর কিছুই নয় — তিনি ভেবেছিলেন বল সীমানা ছাড়িয়ে চার হয়ে গেছে, কিন্তু আসলে শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের ধীরগতির আউটফিল্ডের কারণে বল শেষ পর্যন্ত সীমানার দড়ি ছোঁয়ার আগেই থেমে যায়। ফলে সেটি চার হয়নি, বরং ক্রিজের বাইরে অবস্থান করায় ক্রিকেটীয় বিধি মোতাবেক রান আউটের শিকার হতে হয় আজহারকে।
বলাই বাহুল্য, ক্রিকেটবিশ্ব এমন অবিশ্বাস্য রান আউট ইতিপূর্বে দেখেনি। এবং এই রান আউটের পেছনে সম্পূর্ণ দায় যে ক্রিজে থাকা দুই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানেরই, সেটিও সকলের ভালো করেই জানা। তাই তো তাদের দুইজনকে নিয়ে, বিশেষত আজহারকে নিয়ে নির্মম সব ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ আর রসিকতায় মেতে উঠেছে সবাই। তবে সকলে তাকে নিয়ে মজা নেয়ায় আজহার কিন্তু মোটেই মর্মাহত নন। বরং এ ঘটনায় মজা পেয়েছেন তিনি নিজেও!
তবে অন্যরা কে কী বলল বা কীভাবে তাকে হাসির পাত্র বানাল, এ নিয়ে আজহার খুব একটা চিন্তিত নন। তার চিন্তা কেবল তার ছেলেরা কীভাবে অনাগত ভবিষ্যতে এই রান আউটের জন্য তাকে খোঁচা দিয়ে যাবে! তার তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে বড়জনের বয়স ১০ বছর। যুক্তরাজ্যে বোর্ডিং স্কুলে পড়ে সে। কিন্তু বাবার এমন হাস্যকর রান আউট সে স্বচক্ষে দেখেছে মাঠে উপস্থিত থেকে। তাই আজহারের এখন আশঙ্কা, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা এই রান আউটের জন্য তাকে স্লেজিং করুক বা না করুক, তার ছেলেরা অবশ্যই এটি নিয়ে তাকে জীবনভর স্লেজ করে যাবে।
হাসিমুখেই আজহার স্বীকার করলেন, ‘তারা এটি নিয়ে বছরের পর বছর কথা বলে যাবে। যখনই আমি তাদেরকে কোনো কথা বলব, তারা উল্টো আমাকে এই রান আউটের কথা শুনিয়ে দেবে। আসলে এটির কোনো ব্যাখ্যাই হয় না। দীর্ঘসময় আপনার বলের দিকে নজর না দেয়া একদমই উচিৎ নয়।
‘আসলে এটি এমন একটি ঘটনা যেটির কথা আমি বা আসাদ শফিক চিন্তাও করতে পারিনি। যখন টিম পেইন স্টাম্পের দিকে দৌড়ানো শুরু করল, আমি তখনও ভেবেছিলাম কোনো একটি মজা হতে চলেছে বুঝি। কিন্তু খানিকক্ষণ পরেই যা ঘটল, তাতে আমি রীতিমত হতভম্ব হয়ে যাই।’
অধিকাংশ মানুষ আজহার আলীকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করলেও, কিছু কিছু মানুষ আবার অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদেরও কাঠগড়ায় দাঁড়া করাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য হলো, আজহার আলী যে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্রিজের বাইরে ছিলেন না বরং এটি ছিল নিছকই একটি ভুল বোঝাবুঝি, সেটি তো কারোই অজানা নয়। তাহলে অস্ট্রেলিয়া তো এভাবে তাকে আউট না করলেও পারতো। এভাবে তাকে আউট করার মাধ্যমে কি অজিরা ক্রিকেটীয় স্পিরিটকে কলঙ্কিত করল না?
আজহার নিজে অবশ্য মোটেই তেমনটি মনে করেন না। বরং সব দায়ভার তিনি নিজেই বহন করতে প্রস্তুত। ‘আমার মনে হয় না এটি কোনোভাবেই অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ ছিল। আমি নিজেই সব দায়ভার গ্রহণ করতে রাজি, কারণ আমি পর্যাপ্ত পরিমাণে সচেতন ছিলাম না। কেউ আমার সামনে এসে পড়েনি, আমাকে বাধা দেয়নি, বা এমন কিছুই হয়নি। পুরোটাই আমার নিজের গাফিলতির কারণে হয়েছে।’