নিউজ ডেস্ক,সোমবার,২৯ অক্টোবর, ২০১৮ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পার্লামেন্টারি ফর্ম অব ডেমোক্রাসিতে আছি। সামনে নির্বাচন। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয় তবে অসম্পূর্ণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো সম্পন্ন করতে পারব। দেশ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। ভোট না দিলে পারব না। তবে প্রচেষ্টা থাকবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তারপরে কি হবে সেটা বলতে পারি না। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাটা খুব তিক্ত। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দেয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশ পিছিয়ে যায়। তাই আগামীতে আওয়ামী লীগ পুনর্নির্বাচিত না হলে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে।
আজ রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ডেসটিনেশন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রাইজ ওয়াটার হাউজ কুপারস বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বিবেচনা করছে। তাদের পূর্বাভাস ঠিক হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৮তম বড় অর্থনীতির দেশ। আর ২০৫০ সালের মধ্যে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মতো দেশকে অতিক্রম করে বিশ্বের ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সবদিক থেকে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছিল। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও হাওয়া ভবনকে খুশি না করলে তখন ব্যবসা পাওয়া যেত না। আট বছর পরে সরকার গঠন করে দেখলাম সবদিক থেকে দেশ পিছিয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে, সাক্ষরতার হার কমে গেছে, হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, চাঁদাবাজিতে দেশ ভরে গেছে। সেই অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে পরিকল্পিতভাবে দেশটা যাতে এগোতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। তখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, স্বাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যখন আবার ৭/৮ বছর পর সরকার গঠন করলাম তখন দেখলাম সবকিছু পিছিয়ে গেছে। তখন দু’টো সরকার ছিল একটা হলো হাওয়া ভবন আর একটা প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এসব জায়গায় খুশি না করলে ব্যবসা পাওয়া যায় না। সব জায়গাতেই এরকম একটা অবস্থা ছিল। তিনি সরকার গঠনের পর পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে বলে উলেখ করে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধীরে ধীরে আমরা সবকিছুকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসি এবং দেশটা যাতে এগুতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেই।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা আজকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বাংলাদেশের প্রশংসা করে যাচ্ছেন, আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি চাই আপনারা এটা মাথায় রেখেই ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু কৃষির ওপর নির্ভর না করে দেশে শিল্পায়ন যাতে হয়, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। খাদ্যের যোগানে কৃষির প্রয়োজন রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারও কাজ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ বেসরকারি খাতই পারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে, উন্নত করতে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকার অনেক জায়গায় ডিজিটাল টেলিফোন ছিল না। আমরা এসে সব এলাকায় ডিজিটাল টেলিফোনের ব্যবস্থা করি। হেলিকপ্টার, টেলিভিশন, রেডিও এগুলো এখন বেসরকারি খাতে। একটাই উদ্দেশ্য যাতে বেসরকারি খাতে মানুষের কর্মসংস্থান হয়।
শিল্পকে বহুমুখী করায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতিমধ্যে দেশব্যাপী একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, তবে দেখতে হবে কোন অঞ্চলে কোন জিনিসের উৎপাদন বেশি হয় এবং দেশে বিদেশে তার কেমন চাহিদা রয়েছে। সেটাকে বিবেচনায় নিয়েই আমাদের শিল্পায়ন করতে হবে, উৎপাদন করতে হবে এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হবে। তাহলেই আমাদের শিল্পের বিকাশ হবে।