নিউজ ডেস্ক,বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর ২০১৮:
সরকার তথা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। সংলাপ চেয়ে ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক ড. কামাল হোসেন চিঠি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এরপর সংলাপে সাড়া দেন সরকারপ্রধান। আজ সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের পক্ষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ২০ নেতা উপস্থিত থাকবেন। অপরদিকে ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্টের ১৬ নেতা উপস্থিত থাকবেন।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, এ সংলাপের মাধ্যমে রাজনীতি অঙ্গনে সুবাতাস বইছে। দীর্ঘদিনে অচলাবস্থার অবসানের সম্ভাবনা রয়েছে। শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ বলে আসছে, সংবিধানের বাইরে যাবে না, সংবিধান মোতাবেকই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে বারবার সংলাপ আহ্বান করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি সরকার। এদিকে সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করছে কি না তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে বরাবরই সংবিধানের দোহাই দিয়ে এসেছে। তাতে জাতির সামনে বড় একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- সুষ্ঠু নির্বাচনে সংবিধান কি বাধা নাকি সমাধান? উদ্ভূত পরিস্থিতির সাংবিধানিক গুরুত্ব সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদকে। তিনি বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংবিধান বাধা কিংবা সমাধান- কোনোটাই নয়। সংবিধান মানুষই বানায়। এখন যদি সমস্যা হয়, তাহলে সংবিধান পাল্টাতে হবে। এটা সহজ হিসাব। কথা হচ্ছে, আমরা সমাধান চাই কি না! সমাধান চাইলে সংবিধান বাধা নয়।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ভেতর থেকেও অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। যেমন ধরা যাক, সংসদ ভেঙে দেওয়া। এটা প্রধানমন্ত্রী চাইলেই পারেন। রাষ্ট্রপতিকে বললে তিনিও ভেঙে দিতে পারেন। এ জন্য সংবিধান বাধা নয়। মন্ত্রিসভা ছোট করা- এখানেও সংবিধানের বাধ্যবাধকতা নেই। এটা নিজেদের ব্যাপার। তারপর মিটিং-মিছিল করতে দেবে- এখানে সংবিধানের বাধা নেই। সংবিধান তো মিটিং-মিছিল করতে কাউকে বাধা দিতে বলেনি। সুতরাং সংবিধান রেখেও বহু সমস্যার সমাধান সম্ভব। যে সংবিধান গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়, তা সংবিধান হয় কীভাবে- বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সংবিধানকে সামনে রেখেই বিরোধী দলের যে দাবি আছে তা পর্যালোচনা করে যদি দেখা যায় সংবিধানের সঙ্গে তাদের কোনো দাবি সাংঘর্ষিক তখন সংবিধানের ভেতরে থেকেও যে দাবিগুলো মানতে পারে, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মানা সম্ভব সেগুলো সরকার মানতে পারে। এতে সংবিধান কোনো বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। সংবিধান একটা সামগ্রিক গাইডলাইন। সুতরাং নেতারা যদি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চান, সরকারি দলের সদিচ্ছা থাকলে সংবিধান কোনো বাধা হওয়ার কারণ নেই। সংবিধানের আলোকে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংবিধান নিয়ে কথা বলা আমার জন্য কঠিন। তবে সরকারের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আলোচনা হবে, এটা ভালো দিক। কিন্তু তা কতটা ফলপ্রসূ হবে আপাতত বলা যাচ্ছে না। অতীতের আলোচনাগুলোও তেমন কোনো ফল বয়ে আনেনি। সংবিধান নিয়ে তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয় তা বৃহস্পতিবার বলতে পারব। তখন বোঝা যাবে এটা বাধা নাকি সম্ভাবনা। এক আলোচনার মধ্যে সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে সরকারকেই সমাধান দিতে হবে। কতখানি দেবে, কতটা ছাড় দেবে না দেবে তা এখন বলা যাচ্ছে না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এ সব বিষয় পরিষ্কার করতে হবে এখন থেকেই। যেহেতু সময় বেশি বাকি নেই, ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই সবাইকে মনোযোগী হতে হবে। তারা আরও বলছেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায় শান্তিপূর্ণ সমাধানে তাদের দায়ই বেশি। সংবিধানকে জনকল্যাণে ব্যবহারের দিকে জোর দেন তারা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আজকের আলোচনায় সংবিধানের বিষয়গুলো উত্থাপিত হবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে ড. কামাল হোসেন মন্তব্য করেছেন, প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনও করা যাবে। তাতে সমস্যা থাকার নয়। আজকের সংলাপে সংবিধান ইস্যুটি আলোচনায় আসে কি না, এলেও কীভাবে আসবে তা দেখার অপেক্ষায় উদগ্রীব বাংলাদেশ!
খবর: খোলা কাগজক