নিজস্ব প্রতিবেদক,রবিবার, ০৪ নভেম্বর ২০১৮:
দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ভারতীয় সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া এবং হালুয়াঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১ আসন। আসনটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে। তবে এবার আসনটির দখল বিএনপি নিতে চাইলেও ধরে রাখতে সক্রিয় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রায় ডজন খানেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
হালুয়াঘাট উপজেলার ১২টি ও ধোবাউড়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটার তিন লাখ ৭১ হাজার ৩৩৮ জন। স্বাধীনতার এ আসনে দুইবার বিএনপি, একবার জাতীয় পার্টি ও পাঁচবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আসনটির হালুয়াঘাট উপজেলায় কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া দুটি স্থলবন্দর ও ধোবাউড়া উপজেলার কিছু অংশে চীনা মাটির খনি থাকায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। আদিবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের আদিবাসী নেতা প্রয়াত প্রমোদ মানকিন পাঁচবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে চার মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের ১১ মে তিনি পরলোকগমন করলে উপ-নির্বাচনে তার ছেলে জুয়েল আরেং এমপি নির্বাচিত হন। তিনি এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারুক আহমদ খান। ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান সেলিম মৃধার পদাংক অনুসরণ করে তার সহোদর ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মজনু মৃধা নৌকার মনোনয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পোস্টার ও ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কবিরুল ইসলাম বেগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন, ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মান্নান আকন্দ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন মিনার।
অপরদিকে এ আসনে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির তিন হেভিওয়েট নেতা আফজাল এইচ খান, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও আলী আজগরের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেকটাই পুরনো কাসুন্দির তলানি হয়ে থাকার মতোই। বিগত ২০১৪ সালে বিএনপির এ তিন নেতা একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে পরস্পরের হাত ধরে বিএনপির হাতকে শক্তিশালী করার কঠিন প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি। বরং দ্ব›দ্ব যেন অন্ধের মতো আগের স্থানেই ফিরে আসে। তবে আসনটি পুনরুদ্ধারে দলীয় কর্মসূচি, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের পাশাপাশি ধর্মীয়-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠানে যোগদান, আর্থিক অনুদান প্রদানসহ নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির এই তিন নেতা। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান ওমর রুবেলও ধানের শীষের মনোনয়ন চান। মহাজোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে কাজ করছেন ধোবাউড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সুলতান মামুন রতন এবং হালুয়াঘাট উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম পাপ্পু। এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্বাচন করার প্রত্যাশায় মাঠ ঘুরছেন হুমায়ুন মো. আব্দুল্লাহ আল হাদী।
নিজের প্রার্থিতা সম্পর্কে বর্তমান এমপি জুয়েল আরেং জানান, এ আসনটি আদিবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক রয়েছে। বাবার মতো নিজের অবস্থান ধরে রাখতে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মাঠে কাজ করছেন বলে দাবি তার।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দেশে সুস্থ নির্বাচন হলে এ আসনটি এবার বিএনপি পাবে। সে ক্ষেত্রে দল মনোনয়ন দিলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বিজয় ছিনিয়ে আনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।