ধ্রুপদি মঞ্চ অভিনেতা উৎপল দত্ত। বাংলাদেশের মঞ্চে উৎপল দত্ত ফিরে এসেছেন অন্য রূপে। ব্যাপারটা খুলে বললে, বলতে হয় তরুণ মঞ্চ অভিনেতা হাবিব বাহারের কথা। মঞ্চে হাবিব বাহারের দখলদারিত্ব দর্শককে বারবার মনে করিয়ে দেবে কিংবদন্তি অভিনেতা উৎপল দত্তের কথা। আগামীকাল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হবে ‘ক্রীতদাসের হাসি’র মঞ্চায়ন। নাটকে বাদশাহ হারুন-অর-রশীদের চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি।
হাবিব বাহারের মঞ্চ জীবন শুরু নাগরিক নাট্যাঙ্গনের মাধ্যমে। মঞ্চে পদার্পন প্রাগৈতিহাসিক’র ছোট্ট একটি চরিত্রের মাধ্যমে। চরিত্রটি ছিল নাপিতের, যার কাজ ছিল একটা বাজারে মানুষের চুল কাটা। কোনো ডায়লগ ছিল না, ছিল না বিশেষ সময়ের উপস্থিতি। সেই অতি সামান্য চরিত্রটিকেই অসামান্য করে তুলেছিলেন হাবিব বাহার। বাহার নিজেই শোনালেন সেই গল্প।
‘আমাকে যখন চরিত্রটি দেওয়া হয় তখন নির্দেশক ষড়ৈশ্বর্য লাকী ইনাম বললেন, তুমিও পুরো নাটকের গুরুত্বপুর্ণ অংশ। আমি বললাম, আমার তো কোনো ডায়ালগ নেই। তখন উনি বললেন, কাচির শব্দই তোমার ডায়ালগ। কথাটা আমার কানে ধরল। আমি ওই দৃশ্যে খুব যত্ন নিয়ে কাচি চালালাম। পরে নাটকটির একটি শো হয়েছিল ভারতে। ভারতের ক্রিটিকরা বলেছিলেন, নাপিতের কাচির শব্দটা তাদের খুব ভালো লেগেছে। সেই আত্মবিশ্বাসে বাকীটা পথ চলা।’
‘কৃতদাসের হাসি’ নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, মঞ্চকর্মি জুয়েল জহুর। হাবিব বাহারের অভিনয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাহার ভাই যখন মঞ্চে ওঠেন তখন মূহুর্তেই পুরো মঞ্চের দখল তার হাতে চলে আসে। দর্শককে মাতিয়ে রাখেন শুরু থেকে শেষ অবধি। আমি সহশিল্পী হিসাবে তার সাথে যখনই মঞ্চে উঠি তখনই বিস্মিত হই।’
নাগরিক নাট্যাঙ্গনের আরেক কর্মি হৃদি হক বলেন, ‘শুধু অভিনেতা নন, মঞ্চকর্মি হিসাবে বাহার সবদিক থেকেই পারফেক্ট। ওকে যে লোকে উৎপল দত্তের সাথে তুলনা করছে এটার জন্য ও পুরোপুরি যোগ্য। এর প্রকৃত প্রমাণ মেলে ‘কৃতদাসের হাসি’ নাটকে।’
হাবিব বাহারের অভিনয় সম্পর্কে নাট্যজন ষড়ৈশ্বর্য লাকী ইনামবলেন, বাহার খুব পরিশ্রমি নাট্যকর্মি। অভিনয়ে নতুনত্ব দেখাতে ওর জুড়ি নেই। প্রত্যেকটা চরিত্রে বাহার নিজেকে উপস্থাপন করে সম্পূর্ণ নতুন রূপে। আমি খুব কাছ থেকে ওর বেড়ে ওঠাটা দেখেছি, ওকে নিয়ে তাই গর্ব হয়। অনেকেই আজকাল বলছে বাহারের অভিনয়ে উৎপল দত্তকে খুঁজে পাওয়া যায়। আমি মনে করি দর্শকদের এই মুল্যয়ন পুরোপুরি সঠিক। একজন কিংবদন্তি অভিনেতার সাথে যখন কাউকে তুলনা করা হয় তখন বুঝতে হবে দর্ককের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে গেছে।’
শওকত ওসামানের বিখ্যাত উপন্যাস কৃতদাসের হাসি থেকে নাট্যরূপ দিয়েছেন হৃদি হক। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ষড়ৈশ্বর্য লাকী ইনাম। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন সাজু খাদেম। আবহ সঙ্গীত কামরুজ্জামান রনি। অভিনয় করেছেন, হৃদি হক, হাবিব বাহার, জুয়েল জহুর, কামরুজ্জামান রনি, সুতপা বড়ুয়া, বিশ্বজিৎ ধর, আসিব চৌধুরী প্রমুখ।