নিউজ ডেস্ক |
বৃহস্পতিবার,১৫ নভেম্বর ২০১৮: মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর)। তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সবকিছু ঠিক থাকলেও কর্মসূচির শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যে ৫০টি পরিবারের ১৫০ জনকে দিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর কথা তারা কেউ নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাচ্ছেন না। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে তারা এমনটাই জানিয়েছেন। -খবর বিবিসি।
কাউকে যেন জোর করে পাঠানো না হয় তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে ওই রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে। গত দু’দিনে ওই ৫০টি পরিবারের সবার সাথে কথা বলে ইউএনএইচসিআর তাদের একটি রিপোর্ট বুধবার বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং পুনর্বাসন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করে।
এরপর সন্ধ্যায় কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে ইউএনএইচসিআরের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছেন তালিকাভুক্ত দেড়শ শরণার্থীর একজনও মিয়ানমারে যেতে চায় না। তিনি বলেন, জাতিসংঘের রিপোর্টটি তারা ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং পুনর্বাসন কমিশনও নিশ্চিত করতে পারেননি যে, বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামত প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে কিনা। শরণার্থী কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে আট হাজার শরণার্থীর তালিকা তৈরি করে মিয়ানমারকে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, পরে তালিকাভুক্ত এই লোকগুলোকে বুঝিয়ে ফিরতে রাজী করানো হয়েছিল।
জাতিসংঘ অবশ্য এই প্রক্রিয়া নিয়ে সবসময়ই সন্দেহ প্রকাশ করেছে। গত সপ্তাহে শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে প্রত্যাবাসন না করে কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠিয়ে বুঝতে চেষ্টা করা উচিৎ যে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে গিয়ে নিরাপদে থাকতে পারবে কিনা।
সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে শরণার্থী কমিশনার। বৈঠকগুলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি শুরু হওয়ার প্রস্তুতি হিসেবেই হচ্ছিল। বৈঠকগুলোতে ঢাকা থেকে আগত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তাও ছিলেন।
এদিকে সীমান্তের ঠিক কোন জায়গা দিয়ে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে কক্সবাজারে নিযুক্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসন কর্মসূচিটি যদি আজ থেকে শুরু হয় তাহলে সেটা টেকনাফের ঘুমধুম সীমান্ত দিয়েই হবে।
এরই মধ্যে সেখানে ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এই ট্রানজিট ক্যাম্পটি ঘুমধুম সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে রাবার বাগান নামক একটি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ট্রানজিট ক্যাম্পটিতে ৬০টি কামরা রয়েছে এবং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সেখানে ৩শ জন শরণার্থীর রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে।
এদিকে এই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি নিয়ে রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে নানা ধরণের গুজব ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত যে ১৫০ জন শরণার্থী রয়েছে, তাদের অনেকেই শরণার্থী শিবির থেকে প্রত্যাবাসন এড়াতে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।