নিজস্ব প্রতিবেদক,নরসিংদী প্রতিদিন,শুক্রবার,১৬ নভেম্বর ২০১৮:
ভোটের রাজনীতিতে সংখ্যালঘুরাই নিয়ামক শক্তি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে চাই দেশের ১২ শতাংশ ভোটারকে উপেক্ষা করে, পাশ কাটিয়ে কোন রাজনৈতিক দল ও জোটের ক্ষমতায়ন যেমন সম্ভব নয় তেমনি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণও অসম্ভব। কেননা, ভোটের রাজনীতিতে এরাই হল নিয়ামক শক্তি।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি আমলের মতো রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘু হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ করিনি, সীমাহীন আত্মত্যাগ করিনি, নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার শিকার হয়নি। জাতীয় সংহতি তথা জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়ার তাগিদে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে আমাদের এই অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন আজ বড় বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ‘
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল রাজনৈতিক দল ও জোটের মিলিত উদ্যোগে উৎসবের আবহ তৈরি হলেও এদেশে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি হতে পারছে না। নব্বই পরবর্তী ব্যতিক্রম বাদে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা সংখ্যালঘু জনজীবনে আসে বিপর্যয় ও আর উদ্বেগের কারণ হিসেবে। তাই, নির্বাচন অনেকের কাছে উৎসবের হয়ে এলেও এদের কাছে আসে সংখ্যা ও উদ্বেগের কারণ হিসেবে।
‘প্রায় প্রতিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশন অতীতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিলেও কখনো তা রক্ষা হয়নি। আশা করি এবার তার ব্যত্যয় ঘটবে। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের আহ্বান, নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডা-গীর্জাসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়কে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।’
‘আমরা সকল রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে আহ্বান জানাই, এমন কাউকে আপনারা মনোনয়ন দেবেন না যারা ইতোপূর্বে জনপ্রতিনিধি হয়ে ও থেকে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বার্থবিরোধী অনুরূপ কর্মকান্ডের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ লিপ্ত ছিলেন বা আছেন। এমন কাউকে প্রার্থী করা হলে তবে সেই নির্বাচনী এলাকায় তাদের সংখ্যালঘুদের ভোট দান সম্ভব হবে না বলে মনে হয়। একই সাথে এও আহ্বান জানাই, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন, বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন এর বাস্তবায়নসহ পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নেও নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’
‘জাতীয় রাজনীতিতে ইতোমধ্যে এক গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য সরকার দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জোটের নেত্রী বন্ধুকে স্বাগত জানাই। উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে গোটা জাতির মতোই আমরা প্রত্যাশা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিমচন্দ্র ভৌমিক ও সংগঠনের আরো অন্যান্য নেতাকর্মীরা।