নিউজ ডেস্ক | সোমবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮:
মরে গেলেও নির্বাচন বর্জন করব না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন হতে হবে। আমি মারা গেলেও নির্বাচন বর্জন করব না। আমার লাশ ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবে। আঙুলটাতো থাকবে। ওটা দিয়েই ভোট দেব। আমার লাশও নির্বাচন বর্জনের কথা বলবে না।
সোমবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে ইসির সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, ইলেকশন হতে হবে। তারা (আওয়ামী লীগ) যদি মনে করে, এসব জঘন্য ধরনের আক্রমণ করলে আবেগে আমরা নির্বাচন করব না। এটা আমরা করব না। আমার লাশও করবে না।
ড. কামাল বলেন, আমি ৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনের এজেন্ট ছিলাম। ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এমন পরিস্থিতি দেখিনি। সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। তারা যদি চায় এ রকম জঘন্য আক্রমণ করলে আমরা আবেগের চোটে বলে দেবো নির্বাচন করব না, এটা আমরা বলব না। আমাদের লাশও বলবে না’।
তিনি বলেন, আমরা উনাদের (ইসি) তথ্য দিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বললাম- পুরো দেশে উত্তর-দক্ষিণ সব জায়গা থেকে অভিযোগগুলো পেয়েছি। পেশিশক্তি নিয়ে প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। যারা নির্বাচনে কাজে নেমেছে তাদের ওপরই আক্রমণ হচ্ছে। কেউ পোস্টার লাগতে পারছেন না। বক্তব্য রাখতে পারছেন না। বিভিন্ন জায়গায় একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। যারা নির্বাচন করার জন্য এগিয়ে এসেছেন তাদের নিরুৎসাহিত করার জন্য এসব করা হচ্ছে। এটা খুব ভয়াবহ।
গণফোরামের সভাপতি বলেন, যারা প্রার্থী, আমরা তাদের লিখিত তালিকা (ইসিতে) দিয়েছি। বেশ কিছু কেস- যেখানে সময় স্থানের ছবি দিয়েছি। গুলিবিদ্ধ ব্যারিস্টার খোকন, রোমনার ছবি দিয়েছি। একজন দুই চোখ হারিয়েছেন, সেই মহিলা ছবি দিয়েছি। আ স ম আবদুর রবের ভাঙা গাড়ির ছবিও আমরা দিয়েছি।
তিনি দাবি করেন, এসব ঘটনার কিছু কিছুতে সিইসি বিব্রত হয়েছেন। বিব্রতবোধ করা যথেষ্ট নয়। কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হয়। আমরা তাদের বলেছি- এখনই আপনারা ইনকোয়ারি চান, একদিনের মধ্যে রিপোর্ট নেন, পদক্ষেপ নেন- যাতে বুঝতে পারি নির্বাচন কমিশন দেশকে মুক্ত করতে চায়, যাতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ আমরা পাই।
ড. কামাল বলেন, ঢাকায় কেবল একটি দলের পোস্টার আছে। অন্য দলের প্রার্থীদের কোনো পোস্টার নেই। অনেক খারাপ-ভাল নির্বাচন দেখেছি। এমন দেখিনি।
তিনি বলেন, ৩০ তারিখের পর ইনকোয়ারির কোনো অর্থ থাকবে না। একদিনের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পরশুর মধ্যে পদক্ষেপ নেয়া উচিত, সেটা আমরা মনে করি। সংবিধান অনুযায়ী ইসির ক্ষমতা আছে, কিন্তু উনারা প্রয়োগে করছেন না।
সেনাবাহিনী সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আ স ম রব বলেন, আজ থেকেই আমরা সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্য কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ড. মঈন খান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু এবং গণস্থাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুরে ২টায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, তল্লাশির নামে তাদের বাসাবাড়িতে তাণ্ডব এবং ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ইসিতে লিখিত অভিযোগ করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
লিখিত অভিযোগে ঢাকা মহানগর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, জামালপুর, ঝিনাইদহ, ভোলা, চট্টগ্রাম, শেরপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, ঠাকুরগাঁও, নোয়াখালী, রাজশাহী, যশোর, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, নরসিংদী, নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট, মেহেরপুর, রংপুর, পাবনা, সাতক্ষীরা, ফেনী, সিরাজগঞ্জ ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা ও হামলা করার কথা বলা হয়েছে।