অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছেন শেরপুর-১ সদর আসনের ধানের শীষ প্রতীকের দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিএনপি প্রার্থী ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা। তার সাথে এখন অভিভাবক বলতে আছেন শুধু তার মা। নির্বাচনের শেষ দিকে প্রিয়াংকার সাথে থাকছেন শুধু মা নিলুফা খানম। স্বামী এড. রেহেমিন চৌধুরী প্রথম দিকে থাকলেও নিরাপত্তার কারণে তিনিও বাইরে বের হন না।
২৫ বছরের কিছু বেশি বয়সের এই বিএনপি প্রার্থী শুধু নিজ দল নয়, এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া এক হাজার ৮৪৮ প্রার্থীর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নিলেও রাজনীতি কখনই আকর্ষণ করেনি প্রিয়াংকাকে। হেঁটেছেন নিজের স্বপ্নে। বাবা হযরত আলী শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবেন। তবে বাবা বলতেন তোমাকে রাজনীতি করতে হবে।
২০০৮ সালে মাধ্যমিক ও ২০১০ সালে উচ্চমাধ্যমিক। এর পর ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস। ২০১৬ সালে ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রভাষক হিসেবে যোগদান। এফসিপিএস পরীক্ষায় বসবেন আগামী ৪ জানুয়ারি।
শৈশব থেকেই ডা. প্রিয়াংকার লালিত স্বপ্ন- চিকিৎসক হবেন। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। শিক্ষাজীবন শেষ হয় সাফল্যের সঙ্গে। চিকিৎসক হিসেবে শুরু করেন কর্মজীবন।
অভিভাবক শূন্যের বিবরণ দিতে গিয়ে প্রিয়াংকা বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে শহরের মধ্যশেরির বাসায় বলেন, ‘এতদিন পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ভয়ে আতঙ্কে থাকতাম। আর আজ নির্বাচনের এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের আচরণ দেখে সত্যিই হাসি পাচ্ছি।’
বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, আমি একজন ছোট মানুষ, আমার প্রচারণাতেই ওদের এত ভয় কেন? রাজনীতি তেমন বুঝি না, তবে বিএনপি নির্বাচনে আসাটাকে আওয়ামী লীগ আতঙ্ক মনে করছে।
তিনি বলেন, ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন থাকলেও সকালে গণসংযোগ থেকে তার ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার হয়। এরপর তিনি বাসা থেকে আর বের হননি।
ডা. সানসিলা জানান, নির্বাচনী স্টিয়ারিং কমিটির মধ্যে প্রধান সমন্বয়ক হাতম আলী সোমবার গ্রেফতার হয়ে এখন জেলখানায়। ১৩ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটির মধ্যে ১১ জন মামলা খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাকীরা ডাকলেও মামলা আতঙ্কে আসছেন না। ৪ দিনের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত এই প্রার্থীর অন্তত ৪৫ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে আছেন। বলেন, দলের এমন কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা নেই যিনি মামলায় পড়েননি।
সর্বশেষ ক’জন আইনজীবী এই প্রার্থীর সাথে দেখা গেলেও তারাও আসামি হয়ে গ্রেফতারের ভয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকছেন বলে জানান। বলেন, কেউ মোবাইলটা পর্যন্ত খোলতে সাহস পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে হামলায় আহত হয়েছেন প্রার্থীর খালা, খালাত ভাইসহ অন্তত ১০ জন। ভাংচুর হয়েছে গাড়ি। নির্বাচনী প্রচারণা কেন্দ্রগুলোতেও শুনসান নীরবতা। সব মিলিয়ে মামলা-হামলার ভয়ে কেউ প্রার্থীকে পরামর্শ বা সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছে না। ফলে এক রকম অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছেন বলে জানান বয়সে তরুণ এই নারী প্রার্থী।
বিএনপির এই প্রার্থীর অভিযোগ, দল কিংবা আত্মীয়-স্বজন হামলা মামলার ভয়ে কেউ তার কাছেই আসতে পাচ্ছেন না। অনেক জায়গায় অভিযোগ করলেও কোনো ফল হয়নি। অভিযোগ করতে আসলে সাথে যারা থাকে, সেখান থেকেই তাদেরই গ্রেফতার করা হয়। সকল দায়িত্ব একা একা অভিভাবকশূন্য পালন করতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পালিয়ে থাকা স্থানীয় বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, একদিকে গ্রেফতার আতঙ্ক, অন্যদিকে নেতাকর্মীদের নানা প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই বলেই মোবাইল বন্ধ করে নীরবে আছি। তবে যাই হোক প্রিয়াংকা শেষ পর্যন্ত মাঠে একা হলেও থাকবেন, এমন কথা জানিয়েছেন।
প্রিয়াংকার মা নিলুফা বলেন, ‘সন্তান যতই বিপদে পড়ুক মা হিসেবে তার সাথে থাকবো। এতে আমার মৃত্যু হলেও কোন আফসোস নেই।’
এর আগে শেরপুর-১ সদর আসনে দেশের সর্বকনিষ্ঠ এবং বিএনপির প্রার্থী ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকার গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ ওঠে। সে সময় ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন ডা. সনিসিলা।
শেরপুর জেলা কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করে বলেন, সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৪ টার দিকে সদর উপজেলা ঘুঘুরাকান্দি এলাকায় পাজারো গাড়িতে করে মাসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন ও দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগে বেরিয়েছিলাম। বেলা সাড়ে ৪ টার দিকে ঘুঘুরাকান্দি গ্রামে পৌঁছালে সেখানে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা গণসংযোগে বাধা দিয়ে গাড়িটি ফিরিয়ে দেয়। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় পেছন থেকে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে গাড়ির পেছনের ও দুই পাশের কাঁচ ভেঙে ফেলে তারা। এবং গাড়িতে থাকা লোকজনের ওপর হামলা করে।
এই ঘটনায় তার খালা-ভাইসহ অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন বলে জানান ডা. সানসিলা।
এ সময় বিএনপি প্রার্থী প্রিয়াংকা আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিককে উদ্দেশ করে বলেন, আমি আপনার সন্তানের মতো। আমি আপনার থেকে রাজনৈতিকভাবে কম জ্ঞানের অধিকারী। কিন্তু আমি যেহেতু আপনার সন্তানের মতো আপনি আমাকে আমার কাজ করতে দিন।
প্রিয়াংকা বলেন, আমি জানি আপনি আমাকে গণনায় ধরছেন না। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমি মনে করব আমার নেতাকর্মীদের ধরার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে আপনি ভয় পাচ্ছেন। কাজেই আপনি আমার নেতাকর্মীদের ধরবেন না। দয়া করে তাদেরকে হেরেজমেন্ট করবেন না এবং আমার ওপর আক্রমণ চালাবেন না।
তিনি আরও বলেন, একটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকা দরকার। যেটা হচ্ছে না। আমি জানি পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চায় কিন্তু প্রেসারের কারণে করতে পারছে না। তাদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা আমাদের দিকে দয়া করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর আমরা একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন কামনা করছি।
এ সময় তার মা এবং দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।