শোভিজ ডেস্ক | মঙ্গলবার ,০১ জানুয়ারি ২০১৯:
আজ মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে সাধারণ মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বেলা আড়াইটায় মরদেহ রাখা হয় দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে প্রিয়া সিনেমার সামনে।
মৃণাল সেনের পারিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, কোনো ভক্ত যেন ফুল আর মালা নিয়ে যেন তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা না জানান। তার পরিবার জানায়, মৃণাল সেনের শেষ ইচ্ছে ছিল, তাঁর মরদেহে কেউ যেন ফুলমালা দিয়ে শ্রদ্ধা না জানান। এখানে শ্রদ্ধা জানানোর পর কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত শোকযাত্রা হবে। এই শোকযাত্রায় সাথে থাকবেন তার ভক্তরা। গতকাল সোমবার মৃণাল সেনের একমাত্র পুত্র কুণাল সেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন।
গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে কলকাতার ভবানীপুরের নিজ বাড়িতে মারা যান প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তাঁর জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর শহরে। মৃত্যুর পর বিকেলেই তাঁর দেহ একমাত্র পুত্র ফিরে আসার অপেক্ষায় রাখা হয় কলকাতার হিমঘর পিস ওয়ার্ল্ডে। সেখান থেকেই আজ মরদেহ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিয়ে আসা হবে দেশপ্রিয় পার্কের পাশে প্রিয়া সিনেমার সামনে। এরপর আগামী ৫ জানুয়ারি কলকাতার গোর্কি সদনে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ সভা।
মৃণাল সেনের জন্ম ১৯২৩ সালের ১৪ মে ফরিদপুর শহরে। তাঁর শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ফরিদপুর শহরে। মৃণাল সেনের মৃত্যুতে অবসান হলো বাংলা চলচ্চিত্রের একটি যুগের। যে যুগে মৃণাল সেনের সমসাময়িক চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে ছিলেন সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক।
১৯৪৩ সালে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি চলে আসেন কলকাতায়। তারপর এখানের স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন পদার্থ বিদ্যায়। বাংলাদেশ ছাড়ার পর তাঁর স্মৃতিবাহী বাংলাদেশে তিনি প্রথম পা রেখেছিলেন দীর্ঘ ৪৭ বছর পর ১৯৯০ সালে। দ্বিতীয়বার গিয়েছিলেন তিনি বাংলাদেশে। কিন্তু এই দুবার সফরেও তিনি পা দিতে পারেননি নিজের জন্মভিটে ফরিদপুরে। অবশেষে তৃতীয়বার বাংলাদেশে গিয়ে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন ফরিদপুরে। দেখেছিলেন তাঁর জন্মভিটে। মৃণাল সেনের সহধর্মিণী গীতা সেন প্রয়াত হন ২০১৭ সালে।
মৃণাল সেন ১৮টি ছবির জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছিলেন ১২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। তাঁর প্রথম ছবি ছিল ‘রাতভোর’। নির্মিত হয় ১৯৫৫ সালে। এরপরের ছবি ছিল ‘নীল আকাশের নিচে’। তিনি ২৬টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ করেছেন ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আর চারটি প্রামাণ্য চিত্র। মৃণাল সেনকে নিয়েই কলকাতায় নির্মিত হয়েছে ৫টি তথ্য চিত্র।
তাঁর বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে কলকাতা-৭১, ইন্টারভিউ, পদাতিক, একদিন প্রতিদিন, মৃগয়া, আকালের সন্ধানে। তিনি পেয়েছেন ভারতের বিনোদন জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারসহ (২০০৫) ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মশ্রী (১৯৮১)। পেয়েছিলেন ফরাসি সরকারের দেওয়া ’কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটারর্স’ সম্মান।