নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার,২২ জানুয়ারি ২০১৯:
পুষ্টিবিদদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পেঁয়াজের কলি পুষ্টিগুণে অতুলনীয় একটি সবজি। এ থেকে পাওয়া সালফারের দারুন উৎস। এতে যে ধরনের এলিয়েল সালসাইফ থাকে তা শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য দারুণ উপকারী।
এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে যা হজমে সহায়তা করে। এতে থাকা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে যা চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে। সালাদ তৈরির সময় গাজর আর শসার সঙ্গে পেয়াজের ফুল মিশিয়ে দিলে সালাদের স্বাদ যেমন বাড়বে, তেমনি শরীর দারুণ পুষ্টিও পাবে।
পেঁয়াজের কলি এমন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি। অথচ রাজশাহীতে এ সবজি অনেকটা অবহেলার চোখে দেখা হয়। শহরে অল্প পরিমাণে এ সবজি বিক্রি হলেও গ্রামে এর চাহিদা নেই বললেই চলে। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
রাজশাহীর বাগমারাকে বলা হয়ে থাকে পেঁয়াজ চাষের এলাকা। বাগমারা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ি, এ উপজেলায় এবারে এক হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজের চাষ হলেও পেঁয়াজের কলির কোনো চাহিদা নেই এখানে। কৃষকরা হাটে এ সবজি উঠায়। তবে বেশিরভাগ সময় দাম পায় না বলেই অভিযোগ দেয় অনেকেই। অনেক সময় কৃষকরা সবজি হাটেই ফেলে রেখে চলে যায়।
পুষ্টিবিদদের দেয়া তথ্য অনুযায়ি, বিভিন্ন ধরনের ফ্লু, সর্দি সারাতে পেঁয়াজের কালি দারুন উপকারী। এটা সর্দি কমাতে এবং শীতজনিত ঠান্ডা সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এতে আছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা পাকস্থলি, অন্ত্র এবং মূত্র প্রদাহ রোধে কাজ করে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষত থেকে রক্তপাত বন্ধ এবং সেই ক্ষতকে ইনফেকশনমুক্ত রাখার জন্য পেঁয়াজ কলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টাইফয়েড, ত্বকের বিভিন্ন প্রদাহ, ফুড পয়জনিং এবং দেহের দুর্গন্ধ রোধে পেঁয়াজ কলি অনেক উপকারী। পেঁয়াজ কলিতে বেদনা উপশমকারী উপাদান থাকায় এর থেকে তৈরি লেমন গ্রাস ওয়েল দ্রুত মাথা, মাংসপেশী এবং হাড়ের ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়। জ্বরে ভুক্তভুগীদের খাবারে পেঁয়াজ কলি ব্যবহার করলে বা পেঁয়াজ কলির স্যুপ খাওয়ানো হলে, জ্বর খুব জলদি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কারণ এতে আছে অ্যান্টি-পাইরোটিক উপাদান।
এতো গুনে গুণান্বিত হওয়ার পরেও খাদ্য তালিকায় অনেকেই বাদ দিয়ে রাখে সবজিটিকে। তাই তো চাহিদা কম থাকায় কৃষকরা দাম কম পায়।
উপজেলার মাড়িয়া এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, বাগমারায় পেঁয়াজ প্রচুর আবাদ হয়ে থাকে। পেঁয়াজের দাম কৃষকরা পেলেও পেঁয়াজের কলির কোন দাম পায় না। কৃষকরা হাটে এ সবজি উঠায় ঠিকই। কিন্তু তাদের ভরসা করতে হয় জেলা বা জেলার বাইরে থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপরে। যদি কোনো হাটে পাইকারি না আসে তাহলে কৃষকদের সর্বনাশের শেষ থাকে না। ক্রেতা না থাকলে কৃষকদের পেঁয়াজের কলি হাটেই ফেলে দিয়ে আসতে হয়।
বৃহস্পতিবার (০৩ জানুয়ারী ) উপজেলার হামিরকুৎসা হাট। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর পেঁয়াজের কলি উঠেছে। কিন্তু পাইকার না আসার কারণে দাম নেই। প্রতি আঁটি (প্রায় এক কেজি) পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে এক টাকা করে। তারপরেও নেই ক্রেতা। বাইরের পাইকার সবজি ক্রেতারা হাটে আসেনি। হতাশ কৃষক বসে আছে পেঁয়াজের কলি নিয়ে।
কৃষকরা জানান, সবজিটি বাইরে চাহিদা থাকলেও স্থানীয়ভাবে তেমন কেউ খায় না। সে কারণে বিক্রি হয় না বললেই চলে। বাইরের পাইকার আসলে বিক্রি হয়। হারিমকৃৎসার এলাকার কৃষক মনজুর রহমান জানান, হাটে তিনি ৭৫ আঁটি পেঁয়াজের কলি নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ক্রেতা নেই। সবজি ক্ষেত থেকে উঠানোর পরে রাখা যায় না। সে জন্য দিনে দিনে বিক্রি না হলে সমস্যা। আঁটি প্রতি এক টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লাভের বদলে লোকসান হচ্ছে তাদের।
বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. রাজিবুর রহমান জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে সবজি খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষকে পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পেঁয়াজের কলি পুষ্টিগুণে অনেক ভালো মানের একটি সবজি। সাধারণ মানুষের অনেকেই জানে না এর পুষ্টিগুণ। এটি প্রচারের প্রয়োজনও আছে।
তিনি আরো বলেন, বাগমারার মাটি পেঁয়াজ আবাদের জন্য উপযোগী। প্রতি বছরের মতো এবারো এখানে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকদের সবজি যাতে বিক্রি হয় সে জন্য কৃষি সার্পোটটা খুব বেশি প্রয়োজন। যেটা কৃষকরা পায় না। বাগমারায় জরুরিভিত্তিতে কৃষি মার্কেট তৈরি করা প্রয়োজন। যেখান থেকে কৃষকরা তাদের পণ্য খুব সহজেই বিক্রি করতে পারবে। এ কাজটি করতে পারলে কৃষকরা তাদের পণ্যের দাম পাবে।