নিউজ ডেস্ক | শুক্রবার,২৫ জানুয়ারি ২০১৯:
সব দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্যের অবসানের মধ্য দিয়ে আগামী ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। গতকাল বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।
তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুপক্ষই শান্তিপূর্ণ সমঝোতায়
এসেছেন। ইতিপূর্বে নিজস্ব মতবাদ ও ধ্যান-ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে পৃথকভাবে তাবলিগ জামাত আয়োজনের দাবি জানিয়ে এলেও অবশেষে দুপক্ষের সম্মতিতে একপর্বেই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে যথারীতি এবারও ইজতেমায় যোগ দেবেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানরা। আসবেন বিদেশি মেহমানও। টানা তিন দিন মহান আল্লাহতায়ালার ইবাদত বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকবেন আগতরা। পাশাপাশি মাওলানা ও ধর্মবেত্তাদের বয়ানে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষঙ্গ সম্বন্ধে অবগত হবেন, শাণিত করবেন নিজ নিজ ধর্মীয় চেতনা ও বিশ্বমানবতার কল্যাণবোধ।
তাবলিগ জামাতের রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বিশ্বে মুসলমান শাসকদের ক্ষমতা বিলুপ্তির পর ইসলামী প্রচার কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মুসলমান মনীষীদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস ভারতের দিল্লিতে সূচনা করেন তাবলিগ জামাতের। ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। ধর্মানুরাগীদের উদ্যোগে বাংলাদেশেও চালু হয় এ চর্চা ও দাওয়াতি কার্যক্রম।
১৯৪৬ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় প্রথমবারের মতো। এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্পে, ১৯৫৮ সালে (বর্তমান) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গীতে আয়োজন শুরু হয়। স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে মুসলমানরা অংশ নেওয়ায় এটি বিশ্ব ইজতেমা নামে পরিচিতি লাভ করে।
দীর্ঘদিনের এ সংস্কৃতিতে বড় আকারে দ্বন্দ্ব সংঘাতে জন্ম হয় গত বছর থেকে। তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভির ধর্মীয় অবস্থান এবং কয়েকটি উক্তিতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের তাবলিগের একটি পক্ষ। সাদ কান্ধলভির বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য নিয়ে দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে তাবলিগ। আলেমরা সাদবিরোধী ও সাদপন্থি দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিবাদে জড়ান। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সাদ কান্ধলভিপন্থি বাংলাদেশ তাবলিগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দেন মাওলানা সাদবিরোধী কওমিপন্থি শূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। দুপক্ষের বাদানুবাদ ও মতানৈক্যের কারণে গত বছর বয়ান না করেই ফিরে যেতে হয় সাদ কান্ধলভিকে। পরে উভয়পক্ষই দাবি জানান, আলাদাভাবে ইজতেমা আয়োজনের। গত বছরের ডিসেম্বরে ইজতেমার আয়োজন করা হলে উভয়পক্ষ সংঘাতে জড়ায়। মৃত্যু হয় বয়োবৃদ্ধ এক মুসল্লির। তারপর বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষপর্যন্ত প্রয়োজন হয় সরকারের হস্তক্ষেপের।
গত বুধবার মন্ত্রণালয়ে উভয়পক্ষের মুরব্বিদের নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সভা শেষে মন্ত্রী জানান, বিবাদ মিটে গেছে, দুই পক্ষই অভিন্ন ইজতেমায় অংশ নিতে সম্মত হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়, মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশ নেবেন না। এ বৈঠকের অংশ হিসেবে গতকাল ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তাবলিগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক শেষে তারিখ ঘোষণা করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুপক্ষ দুটি ডেট ঠিক করছিলেন। একদল বলেছিলেন ৮ তারিখ (৮, ৯, ১০ ফেব্রুয়ারি), আরেক দল বলেছিল ২২ (২২, ২৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি)। তখন মীমাংসার পথ হিসেবে আমরা দুটোর মাঝামঝি একটা তারিখ রাখলাম ১৫, ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি। এ তিন দিন একসঙ্গে টঙ্গীর ময়দানে অন্য বছরের মতো বিশ্ব ইজতেমা সুন্দরভাবে পালিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন করব, আপনারা জেনে খুশি হবেন বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। গোলমাল-গোলযোগ নেই, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়োজিত রেখে ইজতেমা সুন্দরভাবে করার প্রয়াস নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের কারণেই আমরা এটি করতে সক্ষম হয়েছি বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান, তাবলিগের শূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম।