1. shahinit.mail@gmail.com : dhaka24 : ঢাকা টোয়েন্টিফোর
  2. arifturag@gmail.com : ঢাকা টোয়েন্টিফোর : ঢাকা টোয়েন্টিফোর
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির জুম্মার নামাজ আদায়

Dhaka24 | ঢাকা টোয়েন্টিফোর -
  • প্রকাশ | শুক্রবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
  • ১৬০ পাঠক

রাসেল খান,
অনুকুল আবহাওয়া, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, ধর্মীয় উদ্দীপনায়, ইজতেমার পক্ষ-বিপক্ষ মতাদর্শী মুসল্লিদের অংশগ্রহন ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুক্রবার বাদ ফজর আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ঈমান, আমল ও আখলাক, দাওয়াত ও তাবলীগ সম্পর্কে তাবলীগী বুর্জুগ, ইসলামী চিন্তাবিদ, আলেম ও পাকিস্থানের মাওলানা জিয়াউল হকের আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ পর্ব। রাজধানী ঢাকার নিকটতম টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলীগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের বৃহত্তম জুম্মার জামাত। ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ মুসল্লি¬¬ ছাড়াও রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ রেলপথ, সড়ক পথ, নৌপথসহ বিভিন্ন যানবাহন এবং অনেকে পায়ে হেঁটে শরীক হন এই বৃহত্তম জুম্মার জামাতে। বিশ্বেও অর্ধশতাধিক দেশের প্রায় এক হাজার প্রতিনিধিসহ লাখো মুসল্লি¬র অংশগ্রহণে অসীম, অনন্ত ও প্রেমময় আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত বন্দেগি আর কোরআন হাদিসের আলোচনায় এখন বিশ্ব ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেলে পবিত্র ধর্মীয় আবহাওয়া বিরাজ করছে। শনিবার দুপুরের আগে আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সভাপতিত্বহীন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় সমাবেশের প্রথম দফা শেষ হবে। সকাল থেকেই সর্বস্তরের মুসলমানরা জুমার জামাতে শামিল হওয়ার জন্য টুপি, পাঞ্জাবী পরে জায়নামাজ হাতে ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। দেশ বিদেশের মুসল্লির সাথে একই জামাতে শরীক হয়ে নামাজ আদায় করার মাধ্যমে বেশি সাওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে সকলের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাকুলতা। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই মুসল্লিদের ঢল আঁচড়ে পড়ে তুরাগের তীরে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের সমাবেশ ঘটে জুম্মার জামাতে। টঙ্গী, উত্তরা, কামারপাড়া, মিরপুর, আব্দুল্ল¬াপুরসহ আশপাশের এলাকার মসজিদে জুম্মার জামাতে মুসল্লি সংখ্যা ছিল খুবই কম। ইজতেমা মাঠে জুম্মার জামাত সুবিশাল প্যান্ডেলের গন্ডি ছাড়িয়ে বিস্তৃতি লাভ করে চার পাশে। দুপুর ১২টার দিকে মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকে মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুম্মার নামাজে শরিক হয়েছেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশ কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১টা ৪২ মিনিটে শুরু হওয়া জুম্মার জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের সূরা সদস্য, শীর্ষ মুরুব্বি, কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ যোবায়ের আহমদ।
টঙ্গীর যেদিকে চোখ যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবী পড়া মুসল্লিদের দেখা মেলে। পুরো টঙ্গী নগরী যেন টুপি-পাঞ্জাবী পড়া মানুষের নগরে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশ থেকে মুসল্লি-দের টঙ্গী মুখি স্রোত অব্যাহত রয়েছে। বহুল কাঙ্খিত আখেরী মোনাজাত পর্যন্ত এ স্রোত আরো প্রবল হবে। তুরাগ তীরবর্তী বিশাল প্রান্তরে নির্মিত পাটের চট ও লাইলন কাপড়ের প্যান্ডেল ইতোমধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে যারা আসছেন তাদেরকে নিজ উদ্যোগে তাবু টানিয়ে অবস্থান নিতে হচ্ছে। গত দু’দিনে শীতের তীব্রতা কম থাকায় মুসল্লিদের ভোগান্তি কিছুটা কম হলেও ধুলায় ধূসরিত গোটা ইজতেমা এলাকায় চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ওয়াসা এবং ফায়ার সার্ভিসের উদ্যোগে প্রধান প্রধান সড়ক ও বিদেশী মুসল্লিদের চলাচলের পথে পানি ছিটানো হলেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে উদাসীনতার কারনে তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অপ্রতুল। একদিকে পানি ছিটিয়ে যাচ্ছে ওয়াসার গাড়ি অন্যদিকে মুহুর্তেই আবার ধুলায় ধূসর হচ্ছে রাস্তুাগুলো। ফলে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছে সর্দি, কাশি ও পেটের পীড়া নিয়ে শত শত মুসল্লি¬¬।
জুমার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহন : গতকাল শুক্রবারের জুম্মা নামাজে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এড, মো. আজমত উল্লা খান, সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মো. হুমায়ুন কবীর, গাজীপুর মেট্রো পলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমানসহ প্রশাসনের উধ্বতন কর্মকর্তাগণ, জেলা পর্যায় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
যারা বয়ান করলেন : বৃহস্পতিবার বাদ আসর বয়ান করেন পাকিস্থানের মাওলানা ওবায়দুল্লা খুরশীদ, বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা আহমেদ লাঠের আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুর হয় ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। তার বয়ান বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। গতকাল বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্থানের মাওলানা জিয়াউল হক, বাদ জুম্মা বয়ান করেন সৌদির মাওলানা শেখ গাছ্ছাইন, বাদ আছর বয়ান করেন মাওলানা যোহায়ের হাসান ও বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা ইব্রাহীম দৌলা।
প্রথম দিনের বয়ান : বয়ানে বলা হয় গরীরেব জন্য ঈদের নামাজের পর অতি উত্তম ইবাদত হলো শুক্রবারের জু’মার নামাজ। এদিনে আল্ল¬াহ্র কাছে যে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। এ নামাজ আদায় করার তৌফিক আল্লাহ আমাদেরকে দান করুন। জুমা’র নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে ওজু-গোসল করে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে তার আমলনামায় নেকী লেখা শুরু হয়ে যায়। আমরা যা করবো আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্যই করবো। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। জুমাপূর্ব বয়ানে বলা হয় সবার অন্তরে ফাজায়েলের এলেম ও আমল আসতে হবে। ফাজায়েলের এলেম শিখলে আমাদের অন্তর ইসলামে মশগুল থাকবে। আমাদের প্রত্যেকের প্রতিদিন যেমন খাওয়া, পড়া ও বিভিন্ন জিনিসের জরুরত হয়, হাজত হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির ফাজায়েলে এলেমের জরুরত আছে। প্রত্যেক এই এলেম জানতে হবে শিখতে হবে। আর যখন ফাজায়েলে এলেম শিখবে, তখন তা দ্বারা আল্লাহ পাকের হুকুম এসে যাবে, এর দ্বারা রাসূল (সা.) এর তরিকা এসে যাবে।
বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ : বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থানের তাবলিগ মারকাজের ১২-১৫ জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করছেন। উর্দূতে বয়ান হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষনিক অনুবাদ করা হচ্ছে। বিদেশী মেহমানরা মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষীর মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান।
হারানো ও প্রাপ্তি : ইজতেমা মাঠের পশ্চিম দিকে হারানো ও প্রাপ্তি সেন্টার খোলা হয়েছে। ময়দানে কেউ কিছু হারালে ও কিছু পাওয়া গেলে সেখান থেকে সঠিক তথ্য প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।
বধিরদের জন্য বয়ান : বিশ্ব ইজতেমায় আগত বধির (কানে শোনে না এমন) মুসল্লিদের জন্য তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে নির্ধারিত খিত্তায় জামাতবদ্ধ করে বয়ান শোনানোর ব্যাবস্থা করা হযেছে। তাদের বিশেষ ব্যাবস্থায় ইশারা ভাষায় ইঙ্গিতের মাধ্যমে বয়ান বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
খাস বয়ান ও খুসশি বয়ান : ইজতেমা ময়দানে আগত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে গতকাল খাস বয়ান করা হয়। এসময় উপস্থিত শিক্ষকদের বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপুর্ন বয়ান করা হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র উদ্দেশ্যে খুসশি বয়ান পেশ করা হয়।
মাস্তুরাত কামরা : ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে মাস্তুরাত কামরা। মাস্তুরাত কামরাটি মহিলাদের জন্য করা হয়েছে। এখান থেকে মহিলাদের দেশ-বিদেশে দাওয়াতি কাজে পাঠানো ও সাপ্তাহিক তালিমের তাফাক্কুদ্র এর দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে।
মাসলেহাল জামাত কামরা : ইজতেমা ময়দানে আগত মুসলি¬দের নতুন যে কোন সমস্যা সমাধানকল্পে ময়দানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে আশরাফ সেতুর পেছনে মাসলেহাল জামাতের কামরা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসে ওই জামাতের মুরুব্বিরা উদ্বুত সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন।
চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থা : টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক মুসল্লি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগীর সংক্যাই বেশী বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ হোসেন। এছাড়া ইজতেমাস্থলের পার্শ্ববর্তী ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে কয়েক শত মুসল্লি বিনামূল্যে ওষুধ সংগ্রহ ও প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে র‌্যাবের প্রায় ৪শ, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি ৩শ’, হামর্দদ ল্যাবরেটরিজ প্রায় ৫ হাজার, ইবনে সিনা ৬শ’ রোগীর চিকিৎসা দিয়েছেন। বেশিরভাগ মুসল্লি ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটের পীড়াজনিত কারণে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিদেশী মুসল্লিদের অংশগ্রহণ: ইজতেমার প্রথম পর্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, কাতার, কানাডা, জার্মানী, ইরান, আমেরিকা, বেলজিয়াম, চীন, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জর্দান, ভারত, দুবাই, পাকিস্থান, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অর্ধশতাধিত দেশের প্রায় সাড়ে ১ হাজার মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন ভাষা-ভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশী মেহমানদের ভিন্ন ভিন্ন তাবু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে নিয়োজিত ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ইজতেমাস্থল ও আশে-পাশের খাবারের দোকান ও হোটেলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচা-বাসী খাদ্য পরিবেশন ও ভেজাল খাদ্য বিক্রয়ের অভিযোগে বিভিন্ন খাবারের দোকান ও হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাসহ জরিমানা আদায় করেছেন।
গ্রেফতার : এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন এলাকার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, চুরি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের পূর্ববতী তালিকা অনুযায়ী গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। গতকাল বিকেল ৪ টা পর্যন্তÍ টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় পকেটমার, ছিনতাইকারীসহ হকার ও বিভিন্ন অপরাধে পুলিশ ১৫ জন, তুরাগ থানা পুলিশ ৮ জন ও উত্তরা থানা পুলিশ ১২ জন। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে টহলরত র‌্যাব ও পোষাকধারী ও সাদা পোষাধারী পুলিশ বিভিন্ন অপরাধে আরো কয়েক জনকে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে।
ওজুর পানি বিক্রি : গতকাল শুক্রবার স্বরণকালের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্টিত হয় টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে। আর এটাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী গতকাল ইজতেমা ময়দানের আশ-পাশের এলাকা গুলোতে জুমার নামাজের জন্য দেদারসে ওজ’ুর পানি বিক্রি শুরু করে সকাল ১১ টা থেকে। প্রতি বদনা ওজু’র পানি ৫/১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। অথচ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শত শত সদস্য প্রকাশ্যে এগুলো দেখেও কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
হকার ও ভিক্ষুক উপদ্রব : বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা ও থানা থেকে টাকা রোজগারের উদ্দেশ্যে কতিপয় ফুটপাত হকার ও ভিক্ষুক ইজতেমা ময়দানে ও আশপাশের এলাকায় ভীড় জমিয়েছে এদের সাথে যোগ হয়েছে পকেটমার, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞানপাটির সদস্যরাও, এদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃংখলা বাহিনী চরম হীমশিম খাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ইতিমধ্যে হকার ও ভিক্ষুক গ্রেফতার শুরু করা হয়েছে।
ময়দানের উত্তরপাশের পানির চৌবাচ্চাগুলোতে ময়লা : ময়দানের উত্তরপাশের পানির চৌবাচ্চাগুলোতে ভাসমান শ্যাওলা ও ময়লা ভাসতে দেখা গেছে। এসব ময়লা পানি দিয়েই আগত মুসল্লিদের ওযু করতে দেখা গেছে। ময়লাযুক্ত পানি ব্যবহারের ফলে পেটেরপীড়া ও চর্মরোগ হতে পারে বলে অনেক মুসল্লি মনে করছেন।
টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনে অন্ত:ত ৩৫ জন আহত হয়েছে। আহত জামালপুরের আমির হোসেন (৪০) নামে অগ্নিদগ্ধ একজনকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতরা অন্যান্যরা হলেন ময়মনসিংহের হেলাল (৫৫), রাজশাহীর খালেক (৫৭), মেহেরপুরের জুনায়েদ (৪০), রাজশাহীর জুবায়ের (২৫), খুলনার খালেদ (২৭), গোপালগঞ্জের তামিম (২৪), ঢাকার তেজগাঁও এর রনি (২৪), ময়মনসিংহের কাদির (৩০), জহিরুল (২৭), জামালপুরের নজরুল (৪২), ঢাকার শনির আখড়ার ওবায়েদ (৩৫), ঠাকুরগাও এর মরিুজ্জামান (৪০), সিরাজগঞ্জের মাহমুদ (৩৩), ফরিদপুরের হাসানুল হক (৪৫), জামালপুরের আজাহার (৪১), সিরাজগঞ্জের জাহিদুল (৩৭), নাঠোরের কাউসার (৩৪), নাঠোরের মোমিন (১৯), ময়মনসিংহের আমির (৫৫) ও নওগার সায়েদ আলী (৫৫), যশোরের আলী হাসান (২০), নোয়াখালী লক্ষীপুরের অলিউল্লা (৬০), ঢাকা ডেমরার জাহিদ (১৭), ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের হাফিজ উদ্দিন (৭০) ও জমির আলীসহ অন্ত:ত ৩৫ জন।
মুসল্লির মৃত্যু : টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত দুই মুসল্লি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারা হলেন ফেনীর সফিকুর রহমান এবং কুষ্টিয়ার মো. সিরাজুল ইসলাম।
রেলওয়ে ও বাস সার্ভিস : রেলওয়ে বিভাগের সিনিয়র তথ্য অফিসার শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চালুসহ ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের বিশেষ ব্যবস্থা অনুযায়ী ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা মোনাজাতে, মোনাজাত স্পেশাল ১,২,৩,৪ নামে ৪টি বিশেষ ট্রেন ঢাকা-টঙ্গীর মধ্যে বিভিন্ন চলাচল করবে। আখেরি মোনাজাতের আগে ও আখেরি মোনাজাতের দিন (১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা থেকে টঙ্গী একটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়াও ১৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার হওয়ায় ঐদিন জুম্মা স্পেশাল নামে একটি বিশেষ ট্রেন চালু থাকবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, ১৭ ফেব্রুয়ারি লাকসাম-টঙ্গী ও জামালপুর-টঙ্গী রুটে ২টি ট্রেন চালু থাকবে। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত ঢাকা অভিমুখী সকল আন্ত:নগর, মেইল এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন টঙ্গী ষ্টেশনে ২ মিনিট করে থামবে। ১৮ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের দিন সকল আন্ত:নগর ট্রেন ও মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন সমূহ (আপ ও ডাউন) টঙ্গী ষ্টেশন ২ মিনিট করে থামবে। এছাড়া, ইজতেমার কারণে আগামী ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি সকল ডেমু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া ইজতেমায় মুসল্লি¬দের যাতায়তের জন্য বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে বিআরটিসি’র বেশকিছু বাস চলাচল করছে। সুষ্ঠুভাবে বাস সার্ভিস চলাচল নিশ্চিত করার জন্য করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে।
পার্কিং : গাজীপুর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস কম্পাউন্ড, মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশে রাস্তার উভয় পাশ, টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে টিআইসি মাঠ, গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ, চান্দনা চৌরস্তা হাইস্কুল মাঠ, তেলিপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড এবং নরসিংদী-কালীগঞ্জ হয়ে আগত মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন টঙ্গীর কে-টু ও নেভি সিগারেট কারখানা সংলগ্ন আশুলিয়া হয়ে আসা গাড়ি প্রত্যাশ মাঠ ও আশাপাশের খোলা স্থান ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় মানুষের আসার সুবিধার্থে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচলে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্ত এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্ত আব্দুল্লাপুর থেকে ভোগড়া বাইপাস এবং মীরের বাজার থেকে ষ্টেশন রোড পর্যন্ত উভয়মুখী রাস্তায় সকল প্রকার যানবাহান চলাচল বন্ধ থাকবে।

লাইক কমেন্ড ও শেয়ার করে সাথে থাকুন-

আরো খবর

© All rights reserved | 2016 dhaka24.net by |

Theme Customized BY WooHostBD