নিউজ ডেস্ক | রবিবার,৩ মার্চ ২০১৯:
বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়বে সমৃদ্ধ দেশ
শনিবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলুন উড়িয়ে ঢাকা দক্ষিণাঞ্চলের বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিথিরা- সমকাল
জাতীয় জীববিজ্ঞান উৎসবের অঞ্চলভিত্তিক দ্বিতীয় আসর গতকাল শনিবার বসেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। এ আয়োজনে ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের আট জেলার ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সহস্রাধিক বিজ্ঞানপিপাসু শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের সরস বিজ্ঞানচিন্তার প্রমাণ পাওয়া গেল বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে। একজন জানতে চাইল, কোনো ব্যক্তি তার নিজের গ্রুপের বাইরে অন্য কোনো গ্রুপের রক্ত শরীরে নিতে না পারলেও মশারা কীভাবে সব গ্রুপের মানুষের রক্ত শোষণ করতে পারে? আরেকজনের প্রশ্ন, গাছের পাতার ক্লোরোফিল যদি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে মানব দেহে স্থানান্তর করা যায়, তাহলে মানুষও কি নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারবে? আরেক শিক্ষার্থীর জিজ্ঞাসা, মঙ্গোলীয়দের দাড়ি-গোঁফ গজায় না কেন? জীববিজ্ঞানের গভীরের এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন উৎসবে আসা জ্ঞানী-গুণী অতিথিরা। এর মধ্য দিয়ে শোনা গেল আশার বারতা- বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে জ্ঞান-গবেষণায় সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কারিগর হবে আগামী প্রজন্ম। বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (বিডিবিও) ও সমকাল আয়োজিত এই উৎসবে প্রতিযোগিতা পর্বে অংশ নেওয়া ২২৭ শিক্ষার্থী জাতীয় পর্যায়ের জন্য মনোনীত হয়েছে। পরে তাদের হাতে সনদ ও পদক তুলে দেন অতিথিরা।
বুয়েট অডিটোরিয়ামে উৎসবের পুরস্কার বিতরণী ও প্রশ্নোত্তর পর্বে অতিথি ছিলেন বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের এনাটমি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডা. শামীম আরা, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইমামুল হাসান ভূঁইয়া। বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. মুহাম্মদ তারিক আরাফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জাতীয় জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান কোচ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার। প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করেন বিডিবিও’র সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী।
অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা গণিত অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জিতে এসেছে। জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে গতবার ব্রোঞ্জপদক জিতলেও আগামীতে তারা স্বর্ণপদক জিতবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাঙালিরা বরাবরই মেধার স্বাক্ষর রেখে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভারতসহ অন্য দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমরাই এগিয়ে। তাই নিজেদের উৎসাহ-উদ্দীপনা আরও বাড়াতে হবে। তোমাদের মাধ্যমেই মেধাবী হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করবে বাংলাদেশ।
ডা. শামীম আরা বলেন, পড়ার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার শেকড় যত তেঁতো, ফল তত মিষ্টি। তাই বেশি বেশি পড়ালেখার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।
মুস্তাফিজ শফি বলেন, শুধু বিজ্ঞানী হলেই চলবে না, দেশটাকে বুকের মধ্যে রাখতে হবে। মাকসুদুল আলমদের মতো খ্যাতিমান অগ্রজরা দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন বলে আজও তাদের সবাই স্মরণ করছে। আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে পদক বিজয়ীরা যাতে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের সঙ্গে সমকাল থাকবে। তিনি বলেন, বিজ্ঞানের সব উদ্যোগের সঙ্গে সমকাল থাকতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম সামনের সব অন্ধকার দূর করবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার বলেন, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন অলিম্পিয়াড অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞান চর্চা গতি পেয়েছে। আগামী দিনে জীববিজ্ঞান গবেষণাকে আরও এগিয়ে নেবে নতুন প্রজন্ম।
এর আগে সকালে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে পতাকা উত্তোলন করেন অতিথিরা। এরপর বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। তার আগে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বুয়েট ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এতে শিক্ষার্থী-অভিভাবক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সমকাল সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় পরিচালক সিরাজুল ইসলাম আবেদ, বিডিবিওর যুগ্ম সম্পাদক অনিরুদ্ধ প্রামাণিক প্রমুখ।
ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির আগ্রহী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি- এ তিন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব আয়োজনের কারিগরি সহযোগী ‘ল্যাব বাংলা’। অনুষ্ঠানে বিশেষ সহযোগিতায় রয়েছে ‘কথাপ্রকাশ’।
১০টি অঞ্চলকে ভাগ করে সাজানো হয়েছে জীববিজ্ঞান উৎসব। শুক্রবার ময়মনসিংহ থেকে এর সূচনা হয়। আগামী ৮ মার্চ বগুড়া ও চট্টগ্রামে উৎসব হবে। উৎসব চলার মধ্যেই অঞ্চলভিত্তিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের অনলাইন নিবন্ধন শুরু হবে ১০ মার্চ থেকে। জাতীয় পর্যায়ের জন্য মনোনীতদের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে িি.িনফনড়.ড়ৎম ওয়েবসাইটে। ২২ মার্চ জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শেষে অনুষ্ঠিত হবে বায়োক্যাম্প। সেখানে উত্তীর্ণ চারজন বিজয়ী অংশ নেবে হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠেয় ৩০তম আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে।