ডেস্ক রিপোর্ট | সোমবার,১১ মার্চ ২০১৯:
সিংহভাগ ছাত্র সংগঠনের দাবি উপেক্ষা করে হলে ভোটকেন্দ্র রেখেই আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ভোটগ্রহণের সময় না বাড়ানো, রাতেই অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স হলে পাঠানোসহ নানা অভিযোগ এবং সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয়ের মাঝেই দীর্ঘ ২৮ বছর পর সেকেন্ড পার্লামেন্ট খ্যাত ডাকসুতে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন শিক্ষার্থীরা।
আজ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পযর্ন্ত চলবে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। এই ছয় ঘণ্টায় ভোট প্রদান করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের ৪২ হাজার ৯২৩ জন ভোটারকে। এরমধ্যে ভিপি-জিএসসহ ডাকসুতে ২৫টি এবং হল সংসদে রয়েছে ১৩টি পদ। এই ৩৮ পদে ভোট দিতে একজন ভোটারের জন্য বরাদ্দ তিন মিনিট। এ নিয়ে একাধিক পক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও সময় বাড়ানোর পথে হাঁটেনি প্রশাসন।
অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনের ডামাডোলের শুরু থেকেই হলে ভোটকেন্দ্র নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল ছাত্রলীগ ছাড়া ছাত্রদল, বাম জোট, কোটা সংস্কার আন্দোলন, স্বতন্ত্র জোটসহ অধিকাংশ প্যানেল এবং প্রার্থী। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে আমলে না নিয়েই হলে ভোটকেন্দ্র বহাল রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সর্বশেষ, গতকাল বিকালেও নানা দাবি নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করে বাম জোট, কোটা আন্দোলনকারী, স্বতন্ত্র জোট, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ সময় ভোট গ্রহণের সময় ৪ ঘণ্টা বাড়ানো, পোলিং এজেন্ট দেওয়ার সুযোগ, স্টিলের পরিবর্তে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং নির্বাচনের দিন হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী খোলা কাগজকে বলেন, প্রশাসন আমাদের দাবিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে নির্বাচন করছে। একটি বিশেষ দলকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্যই তারা সামগ্রিক আয়োজন করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে প্রশাসন ব্যর্থ হলে আমরা ছেড়ে কথা বলবো না।
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, প্রশাসন শুরু থেকেই আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছে। প্রায় সকল ছাত্র সংগঠনের দাবিকে অগ্রাহ্য করে প্রশাসন ভোটকেন্দ্র হলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সর্বশেষ রাতের অন্ধকারে হলে ব্যালট বাক্স পাঠানোয় সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তবে কোনো কারচুপি করার চেষ্টা করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই প্রতিহত করবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে সবার দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হলে ভোটকেন্দ্র রাখা, বার বার দাবি জানানো সত্ত্বেও ভোটগ্রহণের সময় না বাড়ানো এবং সর্বশেষ ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের একক আধিপত্যে থাকা হলে রাতেই ব্যালট বাক্স পাঠানো নিয়ে শঙ্কার কথাও বলছেন তারা। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জসিম উদ্দিন হলের আবাসিক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘প্রশাসনের নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সংশয় ঘনীভূত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো একক প্যানেলের সবাইকে ভোট দেব না; যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দিতে চাই। কিন্তু এই অল্প সময়ে সব পদে ভোট দিতে পারবো কিনা জানি না। তবে আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত কোনো কারচুপির নির্বাচন না হোক।’
ডাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে লড়বে ১২ প্যানেল এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে ২২৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৩ প্রার্থী। এ ছাড়া, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে আটজন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর বাইরে ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে লড়বেন ৮৬ প্রার্থী।
কেন্দ্রীয় ডাকসুতে প্যানেল দিয়েছে ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ-বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইশা ছাত্র আন্দোলন, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও ছাত্র সমাজ।
২০১২ সালে করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক রিটের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের এক রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে বলা হয়। কিন্তু ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করলে এ পদক্ষেপ থমকে যায়। গত ৬ জানুয়ারি পুনরায় বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ওঠে। শুনানি শেষে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে আপিল বিভাগ। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে দুদফা বৈঠক করে ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
খবর: খোলা কাগজ/হাসান ওয়ালী