নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার,৮ জুলাই ২০১৯:
দেশের অর্থনীতির উন্নতি চাইলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখন জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ আমরা এনার্জি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি এবং গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি গ্যাস আমদানির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে।’
সোমবার (৮ জুলাই) গণভবনে চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
ভারতের গ্যাসের মূল্যে সঙ্গে বাংলাদেশের গ্যাসের মূল্যে চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি অনেকেই গ্যাসের মৃল্যবৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন করছেন। অনেকেই বলেছেন, ভারতে গ্যাসের মৃল্যবৃদ্ধি কমে গেছে। ভারতে গৃস্থতালিতে স্থানে ভেদে গ্যাসের দাম একেক রকম, ৩০ থেকে ৩৭ টাকা প্রতি ঘনমিটার। আর বাংলাদেশ দিচ্ছে মাত্র ১২.৬০ টাকায়। অথচ আমাদের প্রতি ঘন মিটার এলএনজি গ্যাস আমদানির করতে খরচ হয় ৬১.১২ টাকা।’
‘শিল্পে আমরা দিচ্ছি ১০.৭০ টাকায় ভারত দিচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। সিএনজিতে আমরা দিচ্ছি ৪৩ টাকায় সেখানে ভারত দিচ্ছে ৪৪ টাকা। বাণিজ্যিক ভাবে আমরা দিচ্ছি ২৩ টাকায় আর ভারতে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায়। ভারতে বছরে ২ বার দাম বাড়ায়, এটা তাদের নীতি তারা সেই নীতিতে চলে। একবার এপ্রিলে আরেক বার অক্টোবরে গিয়ে গ্যাসের দাম সমন্বয় করে। আমরা এলএনজি ৬১.১২ টাকায় নিয়ে এসে দিচ্ছি ৯.৮০ টাকায়। ৬১ টাকায় নিয়ে এসে দিচ্ছি ৯ টাকায়! তারপরও আন্দোলন?।’
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বামজোটের হরতাল প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ডাম-বাম মিলে আন্দোলন করছে। এক সঙ্গে এই তো? খুব ভালো। বহু দিন পরে হরতাল পেলাম, পরিবেশের জন্য ভালো। দাম বাড়ানোর পরও ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এরপরও আন্দোলন যখন করছে, এক কাজ করি- যে দামে কিনব, সে দামে বেচব। ৬১ টাকাই নেব। তাহলে সরকারের কোনও ভর্তুকি দিতে হবে না।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভুলের কারণে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে- দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৪-২০০৫ সালে মিয়ানমারের গ্যাসে ভারত, মিয়ানমার, জাপান, চীন সবাই মিলে বিনিয়োগ করেছিল। ভারত এই গ্যাস নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইন করে। কিন্তু খালেদা জিয়া সরকার এই পাইপলাইনে গ্যাস নিতে দেয়নি। এখানে আমি হলে দিতামই, আমার ভাগটা রেখে দিতাম। পাইপলাইনে মিয়ানমার থেকে গ্যাস আমদানি করলে এলএনজি আমদানি না করলেও চলত। এই গ্যাস পুরোটাই চীন নিয়ে নিচ্ছে। সেখানে গ্যাসের বিপুল মজুদ আছে। দেশে কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতৃত্বে বা সরকার ভুল করলে খেসারত জনগণকে দিতে হবে। আমাদেরকেও তা দিতে হচ্ছে।’
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটুকু যদি বাড়ানো না হয় তাহলে আমাদের সামনে দুটি পথ আছে- হয় আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, সেজন্য এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জির ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলব। অর্থনীতির উন্নতি হবে না। যদি উন্নতি চান এটাকে মেনে নিতে হবে। শুধু আমরা না, গ্যাস আমদানিকারক দেশও এটা মেনে নেয়।’