November 12, 2025, 3:07 pm

ঘুষ ছাড়াই ২৮৬ জনের চাকরি, প্রশংসিত রংপুরের এসপি

Reporter Name 136 View
Update : Wednesday, July 10, 2019

রংপুর | বুধবার,১০ জুলাই ২০১৯:
রংপুরে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধার ভিত্তিতে সর্বাধিক সংখ্যক দিনমজুর ও বর্গাচাষি পরিবারের ছেলে-মেয়রা নিয়োগ পেয়েছে। পরের অবস্থানে রয়েছে পিতৃহীন পরিবারের ছেলে-মেয়েরা। বাদবাকিরা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পরিবারের সন্তান। পুলিশের চাকরি এতদিন সাধারণ মানুষের কাছে ছিল সোনার হরিণের মতো, কিন্তু সে ধারণা বদলে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী।

দেশের সব জেলার মত রংপুর জেলাও সম্পন্ন হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। ঘুষ ছাড়াই রংপুর জেলায় চাকরি পেয়েছেন ২৮৬ জন। এদের প্রত্যেকের খরচ হয়েছে মাত্র ১০৩ টাকা। দালাল চক্র ভিড়তে পারেনি চাকরিপ্রাপ্তদের ধারের কাছে। মেধা ও যোগ্যতার বলে বিনা ঘুষে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন তারা। চাকরি পাওয়ার সংবাদ শুনে খুশিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকের পিতা-মাতা। আর এমন স্বচ্ছ নিয়োগের কারিগর হচ্ছেন রংপুরের জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। এ কারণে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।

পুুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারে রংপুর জেলার ৮ উপজেলার প্রায় ২ হাজার চাকরি প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ২৮৬ জন নির্বাচিত হয়েছে। এদের মধ্যে বর্গাচাষি পরিবারের ছেলে-মেয়েরা ভাল করেছে, তাদের সংখ্যা ৫১ জন। পরের অবস্থানে রয়েছে দিনমজুর পরিবারের ছেলে-মেয়েরা যারা সংখ্যায় ৩৫ জন। এছাড়া ১০ জন রিকশা-অটোবাইক চালক, কাঠমিস্ত্রীর স্তান ১০ জন ও পিতৃহীন পরিবারের ২৬ জন ছেলে-মেয়ে চাকরি পেয়েছে। বাদ বাকি ১৭৪জন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পরিবারের সন্তান। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা-উপজাতীসহ বিভিন্ন কোটায় অনেকেই চাকরি পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে পীরগঞ্জের জাহিদপুর গ্রামের দিনমজুর সাইফুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশে চাকরি আমার কাছে স্বপ্নের ব্যাপার, ভাবিনি চাকরি পাব। তবুও চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলাম দেখি কি হয়। আমি একজন দিনমজুর পরিবারের সন্তান, টাকা দিয়ে চাকরি কোনো দিনও পেতাম না। কারণ আমার বাবার দৈনন্দিন দিনজুরির ওপর সংসার চলে।’

কুমারী লিলিতা কুজুর নামের উপজাতি পরিবারের মেয়ে জানান, তার বাবা ধানাই কুজুর দিনমজুর। বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার গীরাই গ্রামে। মাত্র ১০৩ টাকা খরচ করে তার চাকরি প্রাপ্তির আনন্দে কেঁদে ফেলে সে। তাদের পরিবারের জীবনটা বদলে যাবে বলেও জানান তিনি।

এ রকম আরও কত নাম- রাজমিস্ত্রীর মেয়ে দিলরুবা আকতার দিবা, মোনালিসা আক্তার, দিনমজুর পরিবারের মেয়ে তমা মরমু, কাঠমিস্ত্রী পরিবারের সন্তান সাজ্জাতুল ইসলাম, দিনমজুরের সন্তান খোকন মিয়াসহ আরও যারা নির্বাচিত হয়েছে তারা নিজেরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, বিনা টাকায় পুলিশে চাকরি এটি তাদের কাছে স্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়।

এদিকে রংপুরের সচেতন নাগরিকরা জানান, আগে শোনা যেত পুলিশের চাকরি মানেই লাখ লাখ টাকা। কিন্তু মানুষের এমন শোনা কথা ও ধারণা বদলে দিয়েছে সরকার ও সংশ্লিষ্টরা। রংপুর জেলায় এমন স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় আমরা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

রংপুরের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এবার দালাল চক্রের প্রতারণা বন্ধে কঠোর নজরদারি করা হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার। চাকরি পাওয়ার সংবাদ শুনে তাদের মুখে হাসি ও চোখের পানি আমাদের সফলতারই বার্তা দিয়েছে। সবার কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেউ প্রতারণার শিকার হয়েছে কি না? সবাই উত্তর দিয়েছেন আমরা সবাই আনন্দিত ও বিস্মিত। আমরা চাই পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণাগুলো বদলে যাক।’


More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর