নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ১৯ জুলাই ২০১৯:
৮৯ বছর বয়সে মৃত্যুর দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার ধন-সম্পত্তির পরিমাণও নেহায়েত কম থাকার কথা নয়। এরশাদের মৃত্যুর পর উৎসুক পাঠকের মনে নিশ্চিতভাবেই উঁকি দিচ্ছে- তাহলে স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে কার জন্য সম্পত্তির কতটুকু রেখে গেছেন তিনি? এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই তথ্যগুলোই-
এরশাদের মৃত্যুর পর কারা কী সম্পত্তি পাবেন মৃত্যুর আগে তা তিনি নিজেই নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। এর মধ্যে বিলাসবহুল প্রেসিডেন্ট পার্ক, গুলশানের বাড়ি, দুটি ফ্ল্যাট এবং দলীয় কার্যালয় বণ্টন করে দিয়ে গেছেন।
এরশাদের পরিবার: সাবেক এই রাষ্ট্রপতি প্রথম বিয়ে করেন রওশন এরশাদকে। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বিদিশাকে। ১৯৮৩ হঠাৎ করেই এরশাদ ও রওশন ঘোষণা দেন তারা পুত্র সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন। প্রথম সন্তানের নাম রাখা হয় রাহগির আল মাহি (শাদ এরশাদ)। যদিও মাহির জন্ম নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। মাহি মালয়েশিয়ায় পড়াশুনা শেষ করে এখন ঢাকায় পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী বনে গেছেন।
নব্বইয়ের দশকে বিদিশাকে বিয়ে করেন এরশাদ। ২০০১ সালে বিদিশার কোল আলো করে জন্ম নেয় এরশাদের দ্বিতীয় পুত্র। নাম রাখা হয় শাহতা জারাব (এরিক এরশাদ)। ২০০৫ সালে বিদিশার সঙ্গে ডিভোর্সের পর আদালতের রায়ে এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় বাবার সঙ্গেই থাকতো ১৮ বছর বয়সী এরিক এরশাদ। গান বাজনায় বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে এরিকের। এরিক ছিলেন এরশাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে খুব বেশি সময় দিতে না পারলেও এরিককে নিয়েই ছিল এরশাদের যত ভাবনা।
শাদ এরশাদ ও এরিক এরশাদ ছাড়াও এইচ এম এরশাদের আরও দুই সন্তান রয়েছে। তারা দুজনেই এরশাদের দত্তক নেয়া পালক সন্তান। এর মধ্যে পুত্র ২৫ বছর বয়সী আরমান এরশাদ বর্তমানে এরশাদের বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসাতেই থাকেন। আর একমাত্র পালিত কন্যা ৩৫ বছর বয়সী জেবিন এরইমধ্যে বিয়ে করে লন্ডনে স্থায়ী হয়েছেন।
এরশাদের সম্পত্তি: সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এরশাদ নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে তিনি তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর এই আয়ের উৎস দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, সংসদ সদস্য, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানী ও ব্যবসা থেকে।
এর মধ্যে এরশাদ ব্যবসা থেকে আয় দেখান ২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া তিনি বছরে ১ কেটি ৫ লাখ টাকা বেতন-ভাতা পেতেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় বিশেষ দূত হিসেবে সম্মানী ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৯৬ টাকা। সংসদ সদস্যের সম্মানী ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানী ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা। গুলশান ও বারিধারায় এরশাদের দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার দাম দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। একটি দোকান রয়েছে, যার মূল্য ৭৭ লাখ টাকা।
নির্বাচনী হলফনামার দেয়া তথ্যানুযায়ী, এরশাদের হাতে নগদ অর্থ ছিল ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এরশাদের জমা ছিল ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ১৭ লাখ টাকা জমা রয়েছে। সোনালী ব্যাংকে প্রায় ৩৭ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংকে ৭৩ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে ২৭ হাজার ৫২৪ টাকা ছিল এরশাদের।
শেয়ারে অর্থের পরিমাণ ছিল তাঁর ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর নয় কোটি ২০ লাখ টাকা, ডিপিএস নয় লাখ টাকা। আর এসব তথ্যই তাঁর নির্বাচনী হলফনামা থেকে পাওয়া যায়।
চলাচলের জন্য এরশাদের ৫৫ লাখ টাকা দামের ল্যান্ডক্রুজার জিপ, ১৮ লাখ টাকা দামের নিশান কার এবং ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ রয়েছে। বাসায় ব্যবহারের জন্য ৬০ হাজার টাকা দামের ইলেকট্রনিক আসবাব ছিল তাঁর। তবে এরশাদের কোনো কৃষি ও অকৃষি জমি নেই। হলফনামায় এরশাদ ঋণ দেখিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এক কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ টাকা।
এরশাদের সম্পতির অংশ কে কতটুকু পেলেন: এরশাদ তাঁর সম্পত্তির কতটুকু কাকে দান করেছেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য কেউ জানেন না। পরিবারের সদস্যরাও এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কয়েক মাস আগে পাঁচ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এরশাদ তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সেখানে লিখিতভাবে দান করেছেন।
তবে ট্রাস্টি বোর্ডে দান করা সম্পত্তির বর্ণনা দেননি এরশাদ, সেখানে শুধু দানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ছোট ছেলে এরিককে বোর্ডে রেখেছেন এরশাদ। এছাড়া বোর্ডে আছেন এরশাদের একান্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আক্তার, চাচাতো ভাই মুকুল ও তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তবে বড় ছেলে, স্ত্রী রওশন ও ভাই জি এম কাদেরকে ট্রাস্টি বোর্ডে রাখেননি এরশাদ।
এরশাদ তাঁর সম্পত্তির মধ্যে গুলশান ২-এর বাড়িটি অনেক আগেই স্ত্রী রওশনকে দিয়েছিলেন। বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ তাঁর সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদের নামে দেয়া হয়েছে। পালিত ছেলে আরমানকে দিয়েছেন গুলশানের অন্য একটি ফ্ল্যাট। এছাড়া ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয় এবং রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দান করেছেন তিনি।