ডেস্ক রিপোর্ট | বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯:
হাওর-বাওর ও সমতল ভূমির বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির একটি বিস্তীর্ণ জনপদ কিশোরগঞ্জ জেলা। ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৭০৬ জন মানুষের বসবাস এ জেলায়। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবায় দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সংখ্যা মাত্র ১৬১ জন। গড়ে ১৮ হাজার ৮১২ জনের জন্য এক জন চিকিৎসক। জেলায় চিকিৎসকের এ সংকটের কারণে সেবা মারাত্মকবাবে ব্যাহত হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডাক্তার ভুরি ভুরি পাওয়া গেলেও যখনই আমরা সরকারিভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাই তখনই ডাক্তারের দেখা মেলে না। আর বেসরকারি ক্লিনিকে যখনই যাই তখন আমরা যেন রক্তচোষা বাদুরের দেখা পাই। আমরা এ দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ চায়।
কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস ও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলায় অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৩৪৫। এর মধ্যে শূন্যপদ ১৮৪। ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, সিনিয়র কনসালটেন্ট অর্থো সার্জারি, কার্ডিওলজি, ইএনটি, চক্ষু, ডেন্টাল, জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি, ইএনটি, চক্ষু, রেডিওলজি, চর্ম ও যৌন পদগুলো দীর্ঘদিন যাবত শূন্য। সিভিল সার্জন অফিসে অনুমোদিত তিনটি পদের বিপরীতে দুটি, বক্ষবিধি ক্লিনিকে অনুমোদিত দুটি পদের বিপরীতে একটি, সদর উপজেলায় অনুমোদিত ১৪টি পদের বিপরীতে নয়টি, হোসেনপুর উপজেলায় অনুমোদিত ১৭টি পদের বিপরীতে ১০টি, অষ্টগ্রাম উপজেলায় অনুমোদিত ১৬টি পদের বিপরীতে পাঁচটি, নিকলী উপজেলায় অনুমোদিত ১৭টি পদের বিপরীতে ছয়টি, করিমগঞ্জ উপজেলায় অনুমোদিত ৩২টি পদের বিপরীতে ১৩টি, তাড়াইল উপজেলায় অনুমোদিত ২৮টি পদের বিপরীতে ১১টি, ভৈরব উপজেলায় অনুমোদিত ২৯টি পদের বিপরীতে ১৫টি, কটিয়াদী উপজেলায় অনুমোদিত ৩২টি পদের বিপরীতে পাঁচটি, মিঠামইন উপজেলায় অনুমোদিত ১৬টি পদের বিপরীতে ছয়টি, পাকুন্দিয়া উপজেলায় অনুমোদিত ২১টি পদের বিপরীতে আটটি, বাজিতপুর উপজেলায় অনুমোদিত ২১টি পদের বিপরীতে ১২টি, কুলিয়ারচর উপজেলায় অনুমোদিত ১৬টি পদের বিপরীতে ১৪টি, ইটনা উপজেলায় অনুমোদিত ১৯টি পদের বিপরীতে আটটি, সদর হাসপাতালে অনুমোদিত ৬২টি পদের বিপরীতে ৩৪টি পদ পূরণকৃত রয়েছে। মোট ৩৪৫টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ১৬১টি পদে লোক নিয়োগ থাকলেও বাকি ১৮৪টি পদ শূন্য রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএমের সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল ওয়াহাব বাদল জানান, সারা বাংলাদেশেই ডাক্তার সংকট। সংকট যতদিন থাকবে ততদিন মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুলতানা রাজিয়া বলেন, শূন্যপদ পূরণের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। হাসপাতালে গড়ে ৫০০-৬০০ রোগী প্রতিদিনই ভর্তি হয়। আমরা মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দেই। চিকিৎসক ঘাটতি পূরণ হলে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।
সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, মূলত সারা দেশেই চিকিৎসক সংকট। আমরা বার বার মৌখিক ও লিখিতভাবে শূন্যপদ পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। শিগগিরই দেশে ১২ হাজার ৭০০ জন চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। নিয়োগ হলে চিকিৎসক সংকট আর থাকবে না।
খবর: সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ ৩:২৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৯, দৈনিক খোলা কাগজ