নিউজ ডেস্ক | বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯:
বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা নিয়ে ক্রমশই খুলছে জট। এরইমধ্যে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির অবৈধ সম্পর্কের গুঞ্জন বেশ পুরোনো। রিফাত হত্যায় মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টিও সম্প্রতি সামনে এসেছে।
তবে নতুন খবর হচ্ছে- রিফাতের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে নয়নের সঙ্গে মিন্নির প্রথম বিয়ে হয়েছিল। নয়ন ও মিন্নির বিয়ের রেজিস্ট্রি কাবিনের এমনই একটি কপি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে দেখা যায়, বরগুনা পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী আনিসুর রহমান ভূঁইয়া বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করেন। রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৪৫/২০১৮।
তাদের বিয়ের কাবিননামা প্রকাশ্যে আসার পর সেটিকে বিয়ের প্রমাণ হিসেবে দাবি করছে নয়ন বন্ডের পরিবার। কিন্তু মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হকের দাবি, এটি সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। তার মেয়েকে ফাঁসাতেই এই নাটক সাজানো হয়েছে। আর এই নাটকের হোতা স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ। কেননা, হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ছিলেন সুনামের লোক।
কাজী আনিসুর রহমান ভূঁইয়ার অফিসে রাখা বালাম বইয়ের ৯৬ নম্বর পৃষ্ঠায় পাত্র-পাত্রী ও সাক্ষীদের নামের ঘরে ছেলে পক্ষের ২ জন্য ও মেয়ে পক্ষের ২ জন করে মোট ৪ জন সাক্ষীর নাম আছে।
নয়নের পক্ষের দু’জন সাক্ষীর একজন হলেন রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী। আর মিন্নির পক্ষের সাক্ষীরা হলেন জান্নাতুল ফেরদৌস, পিতা জাহাঙ্গীর আলম। ঠিকানা আয়লা গুচ্ছগ্রাম। আরেকজন হলেন সাইফুল ইসলাম মুন্না, পিতা সহিদুল ইসলাম। ঠিকানা পশ্চিম কলেজ রোড।
নয়ন-মিন্নির বিয়ের কাজী আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নয়ন বন্ড কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবসহ আমার কাজী অফিসে আসেন। তারা বিয়ের কথা বললে আমি দু’পক্ষের অভিভাবক কোথায় জানতে চাই। তখন নয়ন জানান, তার বাবা বেঁচে নেই, মা ফোনে সম্মতি দেবেন। আর মিন্নি জানান, তার বাবা-মা আসতে পারছেন না। তার পক্ষে দু’জন সাক্ষী এনেছেন। এরপর আমি তাদের বিয়ে পড়াই।’
কিন্তু সেদিন কাজী অফিসে নয়ন-মিন্নির বিয়ে হয়নি। বিয়েটা হয়েছিল পরদিন ১৫ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে নয়নের বাড়িতে। এর পর নয়ন যখন জেলে তখন রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির দ্বিতীয় বিয়ে হয়। ওই বিয়ে পড়িয়েছিলেন বরগুনা সদরের কাজী এইচএম রহিম।
এ বিষয়ে নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মিন্নির দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানতাম না। আমার ছেলে জেল থেকে মুক্ত হওয়ার পর মিন্নি আবার আমাদের বাসায় আসতে শুরু করে। তখন আমি আমার ছেলেকে এ নিয়ে বকাবকি করি। নয়ন সব সময় আমাকে চুপ থাকতে বলতো।’
তবে মিন্নির বাবার দাবি, মিন্নিকে ফাঁসাতে ভিত্তিহীন কাবিননামা তৈরি করেছে এমপি শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ। এটা সাজানো কাবিননামা। রিফাত খুনের পর এই কাবিননামা তৈরি হয়েছে। মিন্নি মামলার প্রত্যক্ষদর্শী ও এক নম্বর আসামি বলেই তাকে ফাঁসাতে চাইছে সুনাম। আর রিফাতের সঙ্গে মিন্নির প্রেমের সম্পর্কে শুরু থেকেই আমি রাজি ছিলাম না।
সঙ্গত, গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করেন নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওইদিন বিকেলেই রিফাত শরীফ মারা যান।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এদিকে রিফাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার ১৫ আসামির সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এর মধ্যে গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড।
এছাড়া এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনও ৪ জন গ্রেফতার হয়নি। তারা হলেন- মুসা, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান ও রিফাত হাওলাদার। আগামী ৩১ জুলাই মামলার চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য রয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা পৌরসভার মাইঠা এলাকার নিজ বাসা থেকে মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। প্রায় ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
এর পরদিন বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে শুনানি শেষে মিন্নিকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
রিমান্ডে নেয়ার একদিন পরই বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এমনকি হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গেও তার যোগসাজশ ছিল বলে জানান মিন্নি।
তবে মিন্নির কাছ থেকে জোর করে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন তার বাবা মোজাম্মেল হক। এদিকে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর বরগুনা ও ঢাকার অনেক আইনজীবীই ইতোমধ্যে মিন্নির পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন।