নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০১৯:
রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত তথ্য নিয়ে ছেলেধরার মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে এমন মন্তব্য করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ছেলেধরা নিয়ে যে গুজব রটেছে, এটিও সে রকম। সরকার এটি কঠিনভাবে মোকাবেলা করবে। সাড়ে তিন লাখ মানুষের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ওই তথ্য কাল্পনিক।’
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র এমন মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। যে তথ্য এসেছে সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের কাল্পনিক তথ্য…. এটা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক, বিভ্রান্তিমূলক।’
তিনি বলেন, ‘ছেলে ধরা, সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই সূত্রে গাঁথা। সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করবে। ডেঙ্গু রোগীদের পাশে থেকে কঠিন জবাব দেওয়ার জন্য সরকার প্রতিজ্ঞ।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৫৬৫ জন মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল জুলাই মাসেই রেকর্ড ৬ হাজার ৪২১ জন হাসপাতালে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত আট হাজার ৫৬৫ জন মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল জুলাই মাসেই রেকর্ড ছয় হাজার ৪২১ জন হাসপাতালে গেছেন।
কিন্তু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যান না এবং যারা হাসপাতালে যান, তাদের মাত্র ২ শতাংশের তথ্য সরকারি নজরদারির মধ্যে আসে। এমন যুক্তিতে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের একটি অনুমিত দুদিন আগে একটি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বিশ্লেষণ করে আক্রান্তের এই অনুমিত সংখ্যা পাওয়া গেছে। আর এই অনুমিত হিসাব তৈরিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে সহায়তা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬০ জন ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছেন ৫৫৯ রোগী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সাঈদ খোকন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও মশা মারার বিষয়ে তারা তেমন গুরুত্ব দেননি। যে কারণে এই দুই মেয়র এখন ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যর্থ হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী একজন বলেছেন- কয়েক দিন আগে দেখলাম ঢাকার এক মেয়র বলছেন, মানবদেহের ক্ষতি নয়, মশা মারার এমন ভালো ওষুধ আনার চেষ্টা করছি। চেষ্টা করতে করতে মশার আগে আমরাই শেষ। দুই মেয়রের পক্ষ থেকে মশা নিধনের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। মেয়ররা মশা নিধনে ব্যর্থ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে তার সম্পর্কে যে বক্তব্য এসেছে তার জন্য ওষুধ পরীক্ষা করা হচ্ছে। এবং কার্যকরী ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে পরীক্ষান্তে পাওয়া গিয়েছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে পূর্ণ বয়স্ক মশা মারতে এক লিটার কেরোসিনের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পারমেথ্রিন, শূন্য দশমিক ২ শতাংশ টেট্রামেথ্রিন এবং শূন্য দশমিক ১ শতাংশ এস বায়ো অ্যালাথ্রিনের মিশ্রন ফগার মেশিন দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এক লিটার কেরোসিনের সঙ্গে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ পারমেথ্রিন, শূন্য দশমিক ২ শতাংশ টেট্রামেথ্রিন এবং শূন্য দশমিক ২ শতাংশ অ্যালেথ্রিন মেশানো হয়।
এই মিশ্রনে মশা মারার মূল উপাদান হিসেবে থাকে পারমেথ্রিন, যেটা এখন মশা মারতে কাজ করছে না বলে আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় উঠে আসে।