নিউজ ডেস্ক | শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৯:
রাজশাহীর পবা উপজেলার বেড়পাড়া এলাকায় এবার পুলিশ পাহারায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জোরপূর্বক একটি পুকুর ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগি সংগঠনের এক নেতা জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে ইজারা বহির্ভূত এলাকা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে জোরপূর্বক পুকুর ভরাট করছেন। এ নিয়ে বালু ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সচেতনমহল।
কিন্তু গত মঙ্গলবার এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে পুলিশ সেখানে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছিলো। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেখানে পুলিশ পাহারায় ফের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে জোরপুর্বক পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হলেও শুক্রবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাইদুর রহমান বাদল।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে মদনপুর, কসবা ও চরহরিপুর মৌজা নিয়ে গঠিত বালুমহাল লিজ নেন রাজশাহী নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও বালু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। কিন্তু তিনি লিজ নেয়া বালুমহালের বাহিরে সোনাইকান্দি এলাকা থেকে এতোদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। তার অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সম্প্রতি সোনাইকান্দি এলাকায় পদ্মার তীররক্ষা নতুন বাঁধে ধস নামে। এর পর জেলা প্রশাসন, পবা উপজেলা প্রশাসন ও রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা গত ২০ জুলাই পরিদর্শন করে পদ্মার তীররক্ষা প্রকল্প এলাকায় সকল ধরণের বালু উত্তোলনের উপর নিষেধজ্ঞা জারি করে। এর পর আনোয়ার হোসেন সোনাইকান্দি এলাকা থেকে তার বালু উত্তোলন কর্মকাণ্ড গুটিয়ে নেন।
পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাইদুর রহমান বাদল বলেন, গত ২৩ জুলাই সকাল থেকে বালু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন পদ্মার তীররক্ষা প্রকল্প এলাকার বেড়পাড়ায় বালু উত্তোলন শুরু করে। বালু উত্তোলন করে তিনি একটি পুকুর জোরপূর্বক ভরাট করার কাজ চালায়। পরিবহনের জন্য বালু মজুদ করতে মালিকদের অনুমতি না নিয়ে পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট কাজ শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে বিকেলে বিক্ষোভ করলে পুলিশ গিয়ে বালু উত্তোলন ও পুকুর ভরাট বন্ধ করে দেয়।
সাইদুর রহমান বাদল আরো বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে দামকুড়া থানা থেকে পুলিশ নিয়ে এসে ফের অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পুকুর ভরাট শুরু করেন আনোয়ার হোসেন। এ সময় গ্রামের লোকজন বাধা দিতে গেলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। বিষয়টি সাথে সাথে জেলা ও পবা উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেননি। দুইদিন ধরে সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পুকুর ভরাট অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।
তিনি আরো জানান, ওই পুকুরের মালিক রাধা গোবিন্দ সাহা। সেটি তার রেকর্ডভুক্ত সম্পত্তি। তিনি মারা যাওয়ার পর তার সাত সন্তান জীবিত রয়েছেন। তারা সবাই ওই পুকুরের ওয়ারিশ। গোবিন্দ সাহার সাত সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে ভারতে থাকেন। বাকি দুই সন্তানের মধ্যে এক ছেলে গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলি খেতুরধামে থাকেন। আরেকজন ধর্মপরিবর্তন করে বেড়পাড়ায় বসবাস করেন। তার বর্তমান নাম মুসফিকুল ইসলাম। ওই পুকুরটি বর্তমানে গ্রামের লোকজন পরিবারিক কাজে ব্যবহার করে। কিন্তু পুকুরটির ওয়ারিশদের কোন অনুমতি ছাড়াও জোরপূর্বক ভরাট করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ওয়ার্ড মেম্বার সাইদুর রহমান বাদল।
এ ব্যাপারে হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, বেড়পাড়া এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পুকুর ভরাটের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। যে কোন সময় সহিংসতার আশঙ্কাও রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত জেলা প্রশাসনকে দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এই জনপ্রতিনিধি।
তিনি আরো বলেন, ‘বালু উত্তোলনের জন্য এই ইউনিয়নে ৬টি ঘাট রয়েছে। বেড়পাড়ায় কোন বালুমহাল নেই। ওই গ্রামসহ ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র পাকা রাস্তাটি ২০দিন আগে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছে। বালু পরিবহনে ওই রাস্তা ব্যবহার করলে তিন মাসও টিকবে না। অথচ প্রশাসন অনেকটাই নীরব রয়েছেন’।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ নেওয়াজ বলেন, পদ্মার তীররক্ষা প্রকল্প এলাকায় বালু উত্তোলনের উপর নিষেধজ্ঞা জারি রয়েছে। এছাড়াও ইজারা দেয়া বালুমহালের বাহিরে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। পদ্মার তীররক্ষা প্রকল্প এলাকায় এবং বালুমহালের বাহিরে বালু উত্তোলন করলে তদন্ত করে ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, বেড়পাড়া এলাকায় তাদের কোনো বালুমহাল নাই। সেখানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কিনা সেটি তার জানা নেয়। এছাড়াও জোর করে পুকুর ভরাটের বিষয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি দেখবেন ও জেলা প্রশাসককে জানাবেন বলে জানান তিনি।