আন্তর্জাতিক ডেস্ক | শুক্রবার ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯:
জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গ্যাব্রিয়েল মুগাবে আর নেই। শুক্রবার সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। মুগাবের পরিবারের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

১৯২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ রোডেশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে হারারের জিম্বা জেলার কুতামা জেসুইত মিশনের কাছে জন্মগ্রহণ করেন রবার্ট গ্যাব্রিয়েল মুগাবে। আফ্রিকান রাজনীতিতে তিনি রবার্ট মুগাবে নামেই পরিচিত ছিলেন। পিতা গ্যাব্রিয়েল মাতিবিলি ও মাতা বোনা উভয়েই রোমান ক্যাথলিক ছিলেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মুগাবে ছিলেন তৃতীয়। বড় দুই ভাই - মাইকেল ও দোনাতো উভয়েই তাঁর শৈশবকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন। বাবা মাতিবিলি একজন কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। ১৯৩৪ সালে মাইকেলের মৃত্যুর পর মুগাবে পরিবারের প্রয়োজনে কাজের সন্ধানে বুলাওয়েতে চলে যান।

মুগাবে ম্যারিস্ট ব্রাদার্স এবং জেসুইট বিদ্যালয়সহ মর্যাদাপূর্ণ কুতামা কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি আইরিশ পাদ্রি ফাদার জেরোম ও'হিয়ার ছত্রচ্ছায়ায় নিজেকে গড়েন। তরুণ বয়সে মুগাবে সামাজিক কিংবা শারীরিক কোনভাবেই জনপ্রিয় ছিলেন না। অধিকাংশ সময়ই তিনি ধর্মযাজক অথবা তাঁর মায়ের সাথে পড়াশোনা করে সময় কাটাতেন। অন্যান্যদের সাথে খেলতে পছন্দ করতেন না বরং নিজেই নিজের সাথে মজা উপভোগ করতেন। তাঁর ভাই দোনাতো বলেছিলেন, ‘মুগাবের একমাত্র বন্ধু ছিল বই’।

শিক্ষক হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করলেও তিনি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ফোর্ট হেয়ারে চলে যান। সেখানে ১৯৫১ সালে ইউনিভার্সিটি অব ফোর্ট হেয়ার থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সাক্ষাৎ করেন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব - জুলিয়াস নায়ারে, হার্বাট চিতেপো, রবার্ট সবুকি এবং কেনেথ কাউন্ডা প্রমুখদের সাথে। এরপর সলিসবেরি (১৯৫৩), গুইলো (১৯৫৪) এবং তাঞ্জানিয়ায় (১৯৫৫-১৯৫৭) পড়াশোনা করেন।

ধারাবাহিকভাবে দূরশিক্ষণ প্রকল্পে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা থেকে - প্রশাসন ও শিক্ষায় স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এক্সটার্নাল প্রোগ্রাম থেকে বিজ্ঞান, আইন বিষয়ে স্নাতক এবং বিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

কারাগারের অভ্যন্তরে থেকে তিনি দুটি আইন ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও, জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দীর্ঘ ৩৭ বছর ক্ষমতাসীন ছিলেন মুগাবে। শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতার মর্যাদা পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ১৯৮০-১৯৮৭ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর তারিখে প্রেসিডেন্ট এর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুগাবে।

তাঁর রাজনৈতিক পথচলার শুরু হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে। জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জানু)-এর মহাসচিব ছিলেন তিনি এবং তাঁর দল সংখ্যালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ শাসক ইয়ান স্মিথের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের অধিক সময় তাকে রোডেশিয়ার কারাগারে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে অবস্থান করতে হয়। এডগার তেকেরের সাথে ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়ে রোডেশিয়া ত্যাগ করেন। মোজাম্বিকে অবস্থান করে জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা রোডেশিয়ান বুশ ওয়ারে অংশ নেন।

১৯৭৯ সালে সমাপ্ত ওই যুদ্ধে মুগাবে অনেক আফ্রিকাবাসীর মন জয় করে বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরা ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করে ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এতে মুগাবে জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রীত্বে অভিষিক্ত হন। দেশ পুনর্গঠনে পূর্বে যুদ্ধরত দলসহ শ্বেতাঙ্গ রোডেশিয়ান এবং বিবদমান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্যে পৌঁছান মুগাবে।

জিম্বাবুয়ে ১৯৮০ সালে স্বাধীন হবার পর থেকেই রবার্ট মুগাবে ক্ষমতায় ছিলেন। ৩৭ বছর শাসনের পরে তিনি পদত্যাগ করেন। ৯৩ বছর বয়সে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার জ্যাকব মুডেন্ডার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন রবার্ট মুগাবে।