নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ : কেনাকাটা করতে মার্কেটে যাওয়ার সময় কৌশলে ইরাক প্রবাসী সহ দুই বন্ধুকে অপহরণ করে আরেক বন্ধু আল-আমিন নামে এক যুবক। আল-আমিন পূর্বপরিকল্পিত ভাবে অপহরণকারী চক্রের হাতে তুলে দেয়। এতে অপহরণকারী চক্র তাদের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পরিবারের কাছে আরো দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে নতুবা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের কান্দাইল গ্রামে। অপহৃতরা হলো আমদিয়া ইউনিয়নের কান্দাইল গ্রামের আনোয়ার হোসেন এর ছেলে ইরাক প্রবাসী মাসুদ (২৬) ও তার বন্ধু একই এলাকার রফিক এর ছেলে হারুন (২৭)। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) অপহৃত প্রবাসী মাসুদের বাবা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একই গ্রামের সফুর আলীর ছেলে আল-আমিন (২৫) এর বিরুদ্ধে মাধাবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে জানায় যায়, গত মাসের আগস্টের ১১ তারিখে ইরাক প্রবাসী মাসুদ তার বন্ধু হারুনকে সাথে নিয়ে কেনাকাটা করতে বের হয়। এসময় একই এলাকার সফুর মিয়ার ছেলে আল-আমিন তাদেরকে পরিচিত বড় ভাইয়ের দোকান থেকে ভালো মানের পোষাক কিনে দেয়ার কথা বলে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে নিয়ে কৌশলে অপহরণকারীর চক্রের হাতে তুলে দেয়। তারা কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই অপহরণকারী চক্র তাদের সাথে থাকা স্মার্টফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়। পরে চক্রটি তাদেরকে রূপগঞ্জের একটি বাড়িতে নিয়ে আটকে রেখে ব্যাপক মারধর করে। এক পর্যায়ে তারা তাদের পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। অন্যথায় তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় কিন্তু তাদের পরিবার মুক্তিপণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
পরে তারা কৌশল পাল্টিয়ে বাজে মেয়েদের সাথে অপহৃতদের অশ্লীল চিত্র ধারণ করে এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এতেও অপহৃতদের পরিবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে প্রবাসী মাসুদ কৌশলে পালিয়ে আসে। বাড়ি ফিরে বিষয়টি স্বজনদের জানালে তার বন্ধু হারুনকেও ছেড়ে দেয় চক্রটি। এ ঘটনায় আল-আমিন পলাতক রয়েছে বলে জানান অপহৃতদের পরিবার। তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে একটি মহল।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন ভূঁইয়া রিপন একাধিকবার দরবার করেছেন। তিনি অভিযুক্ত আল-আমিনের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিলেও তার কয়েক ঘন্টা পরই তালা খুলে ফেলা হয়। স্থানীয় বিচারের আশ্বাসে ও প্রবাসী পরিবারে জনবল সংকট থাকায় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়। কিন্তু চেয়ারম্যানের বিচারের ডাকে সাড়া না দিয়ে আল-আমিন গ্যাংস্টার স্টাইলে চ্যালেঞ্জ করে যে “এই ইউনিয়নে তার বিচার করার মত কেউ নাই।”
অপহৃত প্রবাসীর বাবা আনোয়ার হোসেন জানান, মাসুদ প্রায় ১০ বছর ধরে ইরাকে থাকেন, এবার ছুটিতে এসে বিবাহবন্ধনে আবধ্য হয়েছে। আল-আমিনের টার্গেট ছিলো আমার ছেলেকে মেরে ফেলার, কিন্তু আল্লাহর রহমতে সে বেচেঁ গেছে। এঘটনার পরদিনই মাসুদ ইরাকে চলে যায়। বৃদ্ধ বয়সে তিনিও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান। তিনি এ ঘটনার সঠিক বিচারে জন্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রবাসী মাসুদ মুঠোফোনে জানান, আল আমিনের টার্গেট ছিলো অনেক ভয়াবহ, তার গ্যাংদের বড় ভাই আনোয়ার নামে এক যুবক ও আল আমিন সহ ছয়জন এ চক্রের সাথে জড়িত ছিলো। প্রথমে আল আমিন তাদের দুইজনকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া রোডে নিয়ে একটি খালি ঘরে বন্দি করে রাখে। পরে গ্যাং সদস্যরা তাদেরকে ব্যাপক মারধরও করে। এ ঘটনার সে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করে।
অভিযুক্ত আল আমিনের বাবা সফুর মিয়া বলেছেন, এ বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান মিটমাট করে দিয়েছে। আল আমিন বাড়িতে থাকে না। চেয়ারম্যান কি মিটমাট করে দিয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি সুর পাল্টে ফেলেন, বলেন তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন ভূঁইয়া রিপন বলেছেন, ঘটনাটির বিষয়ে মাসুদের বাবা ও হারুনের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক দরবার করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত আল-আমিনকে কোন ভাবেই মজলিশে হাজির করাতে পারেনি তার বাবা সফুর মিয়া। আল আমিন এখন পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে মাধবদী থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়েছি। এব্যপারে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।