নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯ :
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ঢাকা- আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুর একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে মিছিলটি শুরু হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদিক্ষণ শেষে প্রধান গেইট থেকে জয় বাংলা গেটে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ জানাতে থাকেন তারা।

দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ অবরোধ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আটকে পড়ে সহস্রাধিক যানবাহন। অবরোধ স্থল থেকে শুরু করে নবীনগর ও সাভার পর্যন্ত রাস্তার দুইধারে শুরু হয় তীব্র যানজট।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তির বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করার কারণে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা।

আর এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের ফাঁসি ও ভারতের সাথে সম্প্রতি সম্পাদিত চুক্তিকে ‘দেশ বিরোধী’ অ্যাখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে আজকের বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

আন্দোলন কারীরা ‘গো ব্যাক ইন্ডিয়া’, ‘দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘পানি, বন্ধর, নদীর দেশ, জবাব দেবে বাংলাদেশ’, ‘দেশ বিরোধী চুক্তি, মানি না, মানবো না’ এই সব স্লোগানে বিক্ষোভ করে থাকে।

মিছিল শেষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার কোন রকম স্বার্থ ছাড়া দেশের পানি, গ্যাস, বন্দর ভারতকে দিয়ে দিয়েছে। এই একই কথা আবরার বলার কারণে সারারাত পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আবরার যে কথা বলেছে সেটা শুধু তার কথা নয়। বাংলাদেশের সকল মানুষের কথা। আমরা আবরার হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। আবরার হত্যাকা- কোন নির্দিষ্ট অংশের অংশগ্রহণে হয়নি আমরা মনে করি এটা রাষ্ট্রীয় হত্যাকা-।রাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যেই আবরারকে হত্যা করা হয়েছে। আবরার হত্যাকা-ের সাথে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার সংরক্ষন পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম দেশবিরোধী চুক্তি বাংলার জনগন প্রত্যাখান করেছেন দাবি করে বলেন,‘ আজ সীমান্তে মানুষ হত্যা, সুন্দরবনে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নদীর পানির অধিকার, গ্যাস রফতানিসহ সবকিছুই দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে এই সরকার। যারা স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবেনা, মানুষের অধিকার রক্ষা করতে পারবে না তাদের আমরা শাসক হিসেবে মানবো না। আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যে দেশবিরোধী চুক্তি আপনি করেছেন তার সমুচিত জবাব বাংলাদেশের জনগণ, ছাত্রসমাজ দেবে। শেষে বলতে চাই শহীদ আবরার দিচ্ছে ডাক, ভারতীয় আগ্রাসন নিপাত যাক।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের কার্যকারী সদস্য রাকিবুল রনি বলেন, ‘আবরার খুন হয়েছে শুধূ মাত্র ভারত পানি নিয়ে যাবে তার বিরোধিতা করার কারণে। আমরা এইখানে দাঁড়ানো কারণে যে সকল যাত্রীরা মনে করতেছেন আমরা তাদের অনেক কষ্ট দিচ্ছি। তাদের বলতে চাই আবরাররের বাবার কষ্টের চেয়ে কি আপনাদের কষ্ট বেশি? আপনারা যারা উত্তর বঙ্গের আছেন আপনারা যাতে পানির কষ্টে না ভোগেন তার জন্যই কথা বলেছিলো আবরার। মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে খুন করেছে। আমরা বলতে চাই সবকার তাদের এই সন্ত্রাসীদের বিচার করার কারণেই তারা আজকে এমন কাজ করে আসছে। ছাত্রলীগ শুধূ মাত্র সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। সবকারের বিরুদ্ধে যারাই কথা বলছে তারা তাদেরকেই খুন করছে। আমরা বলতে চাই আবরারের খুনিদের শুধূ বিচার করলেই হবে না তাদের সামাজিক ভাবে বয়কট করতে হবে।’

সমাপনী বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরি জয় বলেন, ‘১৯৭১ সালে এই বাংলার জনগন স্লোগান দিতো পিন্ডি না ঢাকা? আজকে ও আমরা একই স্লোগান দিচ্ছি। দেশ পাল্টেছে কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেনি। পূর্ব বাংলা, বাংলাদেশে হয়েছে কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের সেই ক্ষমতাটুকু আজকে ভারত নিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয় তাদেরকে পানি দেয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা বাংলাদেশকে চুষে নিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে খুন করা হয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আবরার হত্যার বিচারের দাবি ও এই দেশ বিরুধী সকল চুক্তি বাতিলের দাবিতে এই বিক্ষোভ মিছিলে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।’