আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জিনান সামারা, ফিলিস্তিনি এই নারী তার হবু বর আবদেল করিম মুখাদেরের জন্য দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষার কারণ, দেড় যুগ আগে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বন্দি হয়েছিলেন মুখাদের। দীর্ঘ সাজা শেষে রবিবার মুক্তি মিলে তার। যখন বন্দি হয়েছিলেন তখন মুখাদেরের বয়স ছিল ৩১, বর্তমানে তার বয়স ৪৯। আর বের হয়েই আগামী শুক্রবার বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন তারা।
দীর্ঘ কারাবাসেও সামারার প্রতি মুখাদেরের ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। বরং ভালোবাসা আরও মজবুত হয়েছে। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের মজিদ্দো কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জালামাহ ইসরায়েলি মিলিটারি চেক পয়েন্টে দেখেন ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে তার ভালোবাসা সামারা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পছন্দের মানুষকে শেষ পর্যন্ত জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে যাচ্ছেন, তাতে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই সামারার।
সামারা বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের ভালোবাসার জয় হবে, এই নিয়ে আমি কখনো আশা হারাইনি। ধৈর্য্য ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমি এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করিনি। তার জন্য অপেক্ষা করেছি, আমার সিদ্ধান্তে আমার পরিবারও হস্তক্ষেপ করেনি।
ইসরায়েলি বাহিনীর দখলদারি ও নিপীড়ন ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে এমন হাজার হাজার গল্পের জন্ম দিয়েছে উল্লেখ করে সামারা জানালেন, আমার গল্পটি দখলদারিত্ব ও নিপীড়নে যারা শিকার হয়েছেন এমন হাজার হাজার গল্পের মধ্যে একটি। অনেক বাড়িতে শহীদ বা বন্দীর মা বা স্ত্রী রয়েছেন।
মুখাদেরের কারাবাসের সময়টাতে সালফিতের সেন্ট্রাল ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে সামারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষাবিষয়ক তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর অনুমতি নিয়ে প্রায়ই হবু বরের সঙ্গে জেলে সাক্ষাৎ করতেন। সামারার সহযোগিতায় জেলে বসেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সম্পন্ন করেন মুখাদের।
হবু স্ত্রীর উৎসাহে আল-কুদস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসরায়েলি স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জন করেন মুখাদের। মুক্তি পাওয়ার রাতে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে বিয়ের পরিকল্পনা নিয়েই সারা রাত কেটেছে বলে জানালেন সামারা।
বছরের পর বছর ধরে বাগদত্তা সামারার ভালোবাসা ও ত্যাগ কখনো ভোলার নয় বলে জানালেন মুখাদের। আমি যদি তাকে পৃথিবীটা দিয়ে দেই তাহলেও এই ঋণ শোধ হবে না। পুরুষের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের নারীরাও ইসরায়েলের দখলদারি ও অবিচারের শিকার।
মুখাদের ইসরায়েলি কারাগারে তার সতীর্থ বন্দীদের কথা স্মরণ করে বলেন, আমার হৃদয়টা এখনো হাজার হাজার বন্দী, আমাদের সতীর্থদের মাঝে পড়ে আছে। যারা সবাই নির্যাতন ও অবিচারের শিকার।