জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করতে এমপিদের অংশগ্রহণ, দক্ষতা বাড়ানো এবং সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোসহ একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ: একাদশ জাতীয় সংসদ-প্রথম থেকে পঞ্চম অধিবেশন (জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০১৯)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
টিআইবি’র সুপারিশে সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বাড়ানো, সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কার্যকারিতা বাড়ানো এবং তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে।
যে সুপারিশগুলো দেওয়া হয়েছে:
সংসদকে কার্যকর করা
জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাস্তবিক অর্থে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে।
জাতীয় সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে, যেখানে স্বীয় দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট এবং বাজেট ব্যতিত অন্য সবক্ষেত্রে সদস্যদের নিজ বিবেচনা অনুযায়ী ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
‘সংসদ সদস্য আচরণ আইন’ প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সদস্যদের সংসদের ভেতরে এবং বাইরের আচরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসারে নির্দেশনা থাকবে।
সংসদীয় কার্যক্রম এমন হবে যেখানে সরকারি দলের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ার পরিবর্তে কার্যকর বিরোধীদলের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত হবে।
সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বাড়ানো
সংসদীয় কার্যক্রমে সদস্যদের কার্যকর অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্যপ্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
সংসদে অধিকতর শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে বিধি অনুযায়ী রুলিং প্রদান ও অসংসদীয় ভাষা এক্সপাঞ্জ করার ক্ষেত্রে আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নসহ আন্তর্জাতিক সব চুক্তি আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকাশযোগ্য নয়, এমন বিষয় ব্যতিত অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির বিস্তারিত সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানো
আইনের খসড়ায় জনমত গ্রহণের জন্য অধিবেশনে উত্থাপিত বিল সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানোর জন্য পিটিশন কমিটিকেও কার্যকর করতে হবে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কার্যকারিতা বাড়ানো
কোনো কমিটিতে সদস্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলে ওই কমিটি থেকে তার সদস্যপদ বাতিল করতে হবে।
বিধি অনুযায়ী কমিটির প্রতিবেদন নিয়মিতপ্রকাশ করতে হবে।
সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটিসহ জাতীয় বাজেটে তুলনামূলকভাবে বেশি আর্থিক বরাদ্দপ্রাপ্ত শীর্ষ দশটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিগুলোর মধ্যে অর্ধেক কমিটির সভাপতি হিসেবে বিরোধীদলীয় সদস্যদের মনোনয়ন দিতে হবে।
কমিটির সভার দেওয়ার সুপারিশের আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গৃহীত ব্যবস্থা এবং ব্যবস্থা গৃহীত না হলে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা লিখিতভাবে কমিটির পরবর্তী সভায় (বিধি অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে) জানানোর বিধান করতে হবে।
তথ্য প্রকাশ
সংসদ অধিবেশনে সদস্যদের উপস্থিতি, বিধি অনুযায়ী কমিটি প্রতিমাসে একটি সভা করতে ব্যর্থ হলে তার ব্যাখ্যাসহ প্রতিবেদন এবং কমিটির প্রতিবেদনসহ সংসদীয় কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
সংসদের ওয়েবসাইটের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে, বাৎসরিক সংসদীয় ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করতে হবে।
সংসদ সদস্যদের সম্পদের প্রতিবছরের হালনাগাদ তথ্যসহ সংসদের বাইরে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য স্বপ্রণোদিতভাবে উন্মুক্ত করতে হবে বলেও সুপারিশ করা হয়।