স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:
ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ঋণ জালিয়াতি, ৪ কোটি টাকা আত্মসাত ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আজ ৪ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেষ নাজমুল আলমের আদালত এ দিন ধার্য করেন।
ওই দিন আলোচিত এ মামলায় ৩ কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। তারা হলেন- সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার সাদিকুল ইসলাম, শাখওয়াত হোসেন মিশন ও একই শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন।
এ মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট এই দুর্নীতির মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
গত ২৫ আগস্ট একই আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার রেকর্ডিং অফিসার (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মৃণাল মজুমদার ও একই শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার রেজাউল হাসান।
এসকে সিনহা ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শাহজাহান, একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়।
এরমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি জিয়াউদ্দিন আহমেদ তদন্তকালে মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মামলায় এখনও পলাতক রয়েছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব বিস্তার করে অবৈধভাবে ভুয়া ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে নগদে উত্তোলন ও বিভিন্ন পে-অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করে অর্জিত অপরাধলবদ্ধ আয় উত্তোলন, স্থানান্তর ও নিজেদের ভোগদখলে রেখে অবৈধ প্রকৃতি উৎস অবস্থান গোপন করে পাচার করেছেন বা পাচারের ষড়যন্ত্রে সংঘবদ্ধভাবে সম্পৃক্ত থেকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এর আগে গেল বছরের ১০ জুলাই দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এ উল্লিখিত ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এসকে সিনহার ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি জানতে ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম শামীমসহ ৬ ব্যাংক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
ওই বছরেরই ৬ মে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুই ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এসময় তাদের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এস কে সিনহাকে তার বাড়ি বিক্রির ৪ কোটি টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।
আইনজীবীরা বলেন, এস কে সিনহার উত্তরার ৬তলা বাড়িটি ৫ কাঠা জমির ওপর ছিল। এ বাড়িটি ২০১৬ সালের শুরুর দিকে টাঙ্গাইলের বাসিন্দা সান্ত্রী রায় ৬ কোটি টাকায় ক্রয় করেন। বায়না দলিলের সময় তিনি ২ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। বাকি টাকা পরিশোধের জন্য নিরঞ্জন ও শাহজাহানের সহযোগিতা নেন। নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা রনজিতের চাচা (চাচা শ্বশুর)। আর শাহজাহান রনজিতের বন্ধু।
তারা বলেন, বাড়ি কিনতে বাকি ৪ কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে নিরঞ্জন ও শাহজাহান ২ কোটি টাকা করে মোট ৪ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণ পরিশোধে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সান্ত্রী রায় জামিনদার হন। জামিনদার হিসেবে টাঙ্গাইল ও ঢাকার আশপাশের বেশকিছু জমি বন্ধক রাখেন সান্ত্রী।
তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে জমির বায়না দলিল হয় এবং ওই বছরের ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহা সোনালি ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার মাধ্যমে চার কোটি টাকা গ্রহণ করেন। পে-অর্ডারের পরে ওই বছর ২৪ নভেম্বর হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে বাড়িটি সান্ত্রী রায়কে বুঝিয়ে দেন।
ফারমার্স ব্যাংক থেকে ঋণের নামে আত্মসাৎ ও পে-অর্ডারে এক ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে ৪ কোটি টাকা জমা দেয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহাকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন জিজ্ঞাসাবাদ করেন।