নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি ও সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর করা মামলার প্রধান আসামি দেলোয়ার হোসেনকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
রবিবার (১৮ অক্টোবর) দেলোয়ার হোসেনকে ১৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করলে বেগমগঞ্জ ৩ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মাশফিকুল হক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরমধ্যে ধর্ষণ মামলায় ৫ দিন ও অপর দুটি মামলায় ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের একটি অস্ত্র মামলায় র্যাবের হেফাজতে দুদিনের রিমান্ডে ছিলেন দেলোয়ার। এরপার তাকে নোয়াখালীতে আনা হলে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানায় পুলিশ।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর বিয়ে হয়। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র সংসার করছিলেন। দীর্ঘদিন স্বামীর সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ ছিল না।
গেল ২ সেপ্টেম্বর রাতে স্বামী ভুক্তভোগীর নারীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার রহিম, বাদল, কালামসহ অন্য সহযোগীদের নিয়ে গৃহবধূর বাড়িতে যায়। সেখানে তারা স্বামীসহ ওই গৃহবধূ অনৈতিক কাজ করছেন বলে অভিযোগ এনে তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে সেই ভিডিও ধারণ করে তারা। দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ রয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূ নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন; কিন্তু নির্যাতনকারী কয়েকজন যুবক তার পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে থাকে। এসময় তিনি হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন ও তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু এক যুবক কয়েকবার গৃহবধূর মুখমণ্ডলে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে মুখসহ শরীর মাড়িয়ে দেন। তার শরীরে লাঠি দিয়ে আঘাতও করতে থাকেন। ওই নারীর নগ্ন ছবি ধারণের চেষ্টা করেন এক যুবক। অপরজন তাকে হাত উঁচিয়ে ভিডিও ধারণে উৎসাহ দেন। আরেকজন নারীর শরীর থেকে অবশিষ্ট পোশাকও টেনে নেন। এসময় ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হবে চিৎকার করেন একজন।
বিষয়টি নজরে আসার পর গেল রবিবার (৪ অক্টোবর) দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই রাতেই বেগমগঞ্জ থানায় পর্নোগ্রাফি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয় মামলায়। আসামিদের সবার বাড়ি বেগমগঞ্জে। তারা একলাশপুরের দেলোয়ার বাহিনীর সদস্য।
শুরুতে ওই নারী ভয়ে মামলার এজাহারে দেলোয়ারের নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি বলে জানা যায়। একপর্যায়ে গেল ৬ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারি দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ওই নির্যাতিতা গৃহবধূ।
এ ঘটনায় মূল হোতা দেলোয়ার ও মামলার প্রধান আসামি বাদলসহ এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এরইমধ্যে মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।