আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নির্বাচনের জয়লাভ করলেও এখনই দায়িত্ব নিতে পারছেন না জো বাইডেন। জানুয়ারির ২০ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি। এরপর জো বাইডেনের হাতে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটি পাল্টে দেয়ার ক্ষমতাও থাকবে। কিন্তু প্রথমে তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে করোনাকালীন বির্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই বিধ্বস্ত মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গায় যা যা করতে পারেন বাইডেন।
মহামারির কারণে লাখো কর্মী ছাঁটাইসহ ঐতিহাসিক সংকোচন থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত একসময়ের চাঙ্গা অর্থনীতি ফের গতিশীল করার জন্যও ভোটাররা ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের বেশির ভাগ নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৭৭ বছর বয়সী বাইডেন। ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, করনীতি ঢেলে সাজানো, অবকাঠামো খাতে বিশাল বিনিয়োগসহ কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিন্তু এ প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে রূপ দিতে প্রথমে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তবে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা যেমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছে, তাতে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হুমকিতে পড়বে। আর যদি সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখে তাহলে বাইডেন তার পলিসি বাস্তবায়নে বেশ হিমশিম খাবেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো তিনিও এমন সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, যখন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিটি বিভিন্ন কারণে ধুঁকছে। গত মার্চে পাস হওয়া কেয়ারস অ্যাক্টের আওতায় ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারির তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালানো হয়েছে।
এছাড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কয়েক মাস কঠোর লকডাউনের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিল। এখন লকডাউন শিথিল হলেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অনেক দূর যাওয়ার বাকি রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্বের শেষ দিনগুলোয় যদি কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ অনুমোদন আটকে যায় তাহলে শপথ গ্রহণের পর বাইডেনের প্রথম দায়িত্ব হবে তা নিশ্চিত করা। পরে তিনি যা করবেন তা হলো করনীতি পরিবর্তন করা, যেমনটা প্রত্যেক প্রেসিডেন্টই তার মেয়াদের কোনো না কোনো সময় করে থাকেন। ২০১৭ সালে করপোরেশন ও ধনীদের কর কমিয়েছিলেন ট্রাম্প।
স্ট্যানফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক পলিসি রিসার্চের পরিচালক ও সিনিয়র ফেলো মার্ক দুগান বলেন, বাইডেন খুব সম্ভব ওই কর কর্তন থেকে সরে আসবেন। বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বছরে ৪ লাখ ডলারের বেশি উপার্জনকারীদের করহার বাড়াবেন। সাধারণ আমেরিকানদের জন্য করহার পরিবর্তনের বিষয়টি ন্যূনতম হতে পারে। তবে উচ্চ আয়কারীদের ওপর উল্লেখযোগ্য করারোপ করা হবে।
এদিকে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের আবাসিক ফেলো কাইলি পমারলিয়ু সতর্ক করে বলেন, ধনীদের ওপর অধিক করারোপে স্বল্পমেয়াদে সুবিধা পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে শ্লথগতি নিয়ে আসতে পারে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, এক হাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ও অন্য হাতে নিয়োগদাতাদের ওপর বৃহদাকার করারোপ বাইডেনের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
বাইডেন যে পদক্ষেপ নিতে পারেন, তার মধ্যে থাকতে পারে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো বিনিয়োগ, ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলার করা এবং ‘আমেরিকান পণ্য ক্রয় করো’ এমন কর্মসূচি। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে চাঙ্গা করতে ‘আমেরিকান পণ্য ক্রয় করো’ উদ্যোগটি চালু হতে পারে।
অবশ্য স্বাস্থ্যসেবা নীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাইডেনের কাছ থেকে আগ্রাসী পদক্ষেপ আশা করছেন ডেমোক্র্যাট পার্টিতে তার সহকর্মীরা। এছাড়া চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের সৃষ্টি করা বাণিজ্যযুদ্ধ কীভাবে সামলাবেন, এ নিয়েও দলে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে।
জেপি মরগান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক মনে করছে, বাণিজ্য ইস্যুতে মনোযোগ দেয়ার আগে অভ্যন্তরীণ নীতির ওপর জোর দেবেন তিনি এবং খুব সম্ভব চীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ‘প্রথম ধাপের’ বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই নবায়ন করতে পারবেন না তিনি। তবে তিনি যে পদক্ষেপই গ্রহণ করুন না কেন ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সংগতি রাখার চেষ্টা করবেন। তিনি ট্রাম্পের মতো ‘একলা চলো রে’ নীতি অনুসরণ করবেন না।
বাইডেনের সামনে যে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা হচ্ছে দেশটির বিশাল বাজেট ঘাটতি, যা ৩০ সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া অর্থবছরে ৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। কভিড-১৯ প্রণোদনা প্যাকেজের জেরে আগের রেকর্ড থেকে দ্বিগুণ হয়েছে এ বাজেট ঘাটতি।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর হ্রাস এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন মার্ক দুগান। তবে ধনীদের ওপর অতিরিক্ত করারোপ করলেই যে সমস্যা শেষ হয়ে যাবে এমনটা মনে করছেন না তিনি। আপনি যদি কর বাড়ান তাহলে সেটা অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলবেই।
বাইডেনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে সিনেটে সম্ভাব্য রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা। তারা সবসময়ই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের পলিসি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে আসছেন। বারাক ওবামার আমলে তার বেশকিছু নীতি আটকে দিয়েছেন রিপাবলিকান সিনেটররা। বিভক্ত আইনসভায় বাইডেনের বেশি কিছু পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা খুব কম। খবর এএফপি।