চায়না বেগম (৪৫)। বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে। পাঁচ মাসের এক মেয়েকে রেখে তার স্বামী শাহজাহান মারা যান প্রায় ২০ বছর আগে। এরপর থেকে চায়না বেগমের জীবনে নেমে আশে ঘোর অন্ধকার।
মেয়েকে নালনপালন করতে শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। এ কারণে চায়না বেগম প্রায় ১৫ বছর আগে গ্রামের বাড়ি থেকে চলে আসেন টাঙ্গাইল পৌর এলাকার পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়ায়। সেখানে ছোট একটি ঘর প্রতিমাসে ৮০০ টাকায় ভাড়া নেন। এরপর শহরের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম-এর বাসভবন ‘সোনার বাংলা’ এবং টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব ভবনের মাঝে শুরু করেন চায়ের দোকান।
প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়েই চলে চায়না বেগমের সংসার। সংসারে অভাব অনটনের কারণে মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়সেই বিয়ে দেন। এক বছর পরেই তার মেয়ে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর মধ্যেই মেয়ের জামাই বায়না ধরেন বিদেশ যাবেন। এ কারণে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে প্রায় তিন লাখ টাকা এনে চায়না বেগম তার মেয়ের জামাইকে দেন বিদেশ যাওয়ার জন্য।
টাকা পেয়ে বিদেশেও পারি জমান মেয়ের জামাই। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই তার। তবে চায়না বেগম শুনেছেন তার মেয়ের জামাই আরেকটি বিয়ে করেছেন। এরপর আবার নেমে আসে তার জীবনে অন্ধকার। মেয়ে এবং নাতনিকে লালন-পালন করতে আবার শুরু হয় রাত-দিন সংগ্রাম।
এরই মধ্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের সহধর্মীনি নাসরিন সিদ্দিকীর নজরে পরে চায়না বেগমের জীবন সংগ্রাম। তিনি (নাসরিন সিদ্দিকী) দেরি না করে তাৎক্ষনিক তার স্বামীকে বিষয়টি জানান এবং চায়নাকে একটি দোকানের ব্যবস্থা করে দিতে বলেন।
স্ত্রীর কথা শুনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার বাসভবনের নিচ তলার মার্কেটে একটি দোকান নিজ খরচে টাইলস, লাইটিং, পানির লাইন এবং অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে চায়না বেগমকে দোকন উপহার দেন।
এদিকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা মূল্যের দোকান উপহার পেয়ে চায়না বেগম খুবই খুশি এবং আনন্দিত।
তিনি জানান, স্যার (বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী) এবং ম্যাডাম (নাসরিন সিদ্দিকী) তাকে দোকানটি উপহার দিয়েছেন। শুধু দোকান-ই নয়, তা মেয়েকেও স্যার এবং ম্যাডাম মিলে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
চায়না বলেন, ‘তাদের জন্য দোয়া ছাড়া আমার কিছুই করার নেই। আমি এবং আমার মেয়ে যতদিন বেচে আছি ততদিন তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাব।’
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জানান, চায়না খুবই অসহায়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এবং তার স্ত্রী দেখে আসছেন চায়না বেগম দিন-রাত ফুটপাতে বসে চা বিক্রি করছেন। এজন্য তার স্ত্রীর (নাসরিন সিদ্দিকী) পরামর্শে এবং অনুরোধে চায়নাকে দোকানটি উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে।