করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই একে একে এই ভাইরাসের শিকার হয়েছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে, ৬৩ টি দেশে এপর্যন্ত ৭৩৫ জন সাংবাদিক করোনা সংক্রান্ত জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেছেন। সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক মিডিয়া সংস্থা, প্রেস এমব্লেম ক্যাম্পেইন (পিইসি) এই তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি আরো জানায়, ৫৪ জনের মৃত্যুতে এশিয়ার সর্বাধিক মৃত্যু সংখ্যার দেশ ভারত, এর পরে রয়েছে বাংলাদেশ (৪৪), পাকিস্তান (২৩), আফগানিস্তান (৯), নেপাল (৩), ইন্দোনেশিয়া (২) এবং জাপান (১)।
পিইসি-র প্রধান সম্পাদক, ব্লেইজ লেমপেন বলেন, “গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা ৭৩৫ জন সাংবাদিকদের মধ্যে, ৩৭৫ জনই ল্যাটিন আমেরিকার বাসিন্দা ছিলেন। ১৪৮ জনের মৃত্যুতে এর পরের স্থানেই রয়েছে এশিয়া। তালিকায় পরবর্তীতে রয়েছে ইউরোপ (১৩৭), উত্তর আমেরিকা (৩৯) এবং আফ্রিকা (৩৬)।” তিনি আরো জানান, জানুয়ারিতে মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে মৃত্যুহারের সর্বাধিক বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে ব্রাজিল ও মেক্সিকো-তে।
গত মাস পর্যন্ত, ৯৫ জন মিডিয়া কর্মীর মৃত্যুতে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে পেরু। ২য় স্থানে রয়েছে মেক্সিকো, যেখানে করোনার শিকার হয়েছেন ৮৪ জন কর্মী। এরপরেই রয়েছে ব্রাজিল (৭৭), এবং ইউরোপের সর্বাধিক মিডিয়া কর্মীর মৃত্যুর দেশ, ইতালি (৪৪)।
তালিকার পরবর্তী স্থানগুলোয় রয়েছে ইকুয়েডর (৪২), যুক্তরাষ্ট্র (৩৮), যুক্তরাজ্য (২২), তুরস্ক (২১), ইউক্রেন (১৪), রাশিয়া (১২), পানামা (১২), বলিভিয়া (১১), কলম্বিয়া (১০), স্পেন (৯), ডমিনিকান রিপাবলিক (৮), নাইজেরিয়া (৮), দক্ষিণ আফ্রিকা (৭), আর্জেন্টিনা (৭), হন্ডুরাস (৭), মিশর (৬), নিকারাগুয়া (৬), ভেনিজুয়েলা (৬), ফ্রান্স (৫), ক্যামেরুন, গুয়াতেমালা, ইরান, এল স্যালভাডোর, জিম্বাবুয়ে (প্রত্যেক দেশে ৩ জন) ইত্যাদি।
আলজেরিয়া, প্যারাগুয়ে, পর্তুগাল এবং সুইডেনে দুই জন করে মিডিয়া কর্মীর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, পোল্যান্ড, উরুগুয়ে, ইসরায়েল, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, চিলি, ইরাক (কুরদিস্তান), কেনিয়া, লেবানন, মোজাম্বিক, উগান্ডা, আজারবাইজান এবং অন্যান্য দেশে একজন করে সাংবাদিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুবরণ করা সাংবাদিকদের পরিবার এবং সহকর্মীদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছে পিইসি পরিবার। আসল মৃত্যুসংখ্যা নিশ্চয়ই আরো বেশি, কেননা সাংবাদিকদের মৃত্যুর কারণ সবসময় উল্লেখ করা হয় না, আবার অনেক সময় তাদের মৃত্যুর ঘোষণাও দেয়া হয় না। কোনো কোনো দেশে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের অভাব রয়েছে। মিডিয়া কর্মীদেরকে দ্রুতগতিতে ভাইরাস প্রতিরোধী করে তোলার চেষ্টা করায় বেশ কিছু দেশকে সমর্থন জানিয়েছে পিইসি। পেশাগত কারণে, মাঠপর্যায়ে কর্মরত মিডিয়া কর্মীরা ভাইরাসের প্রতি উন্মুক্ত হয়ে পড়েন। লেমপেন উল্লেখ করেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ, বিশেষত, ফ্রিল্যান্সার, ক্যামেরাম্যান ও ফটোগ্রাফাররা ঘর থেকে কাজ করতে পারেন না।
পিইসি-র ভারতীয় প্রতিনিধি, নব ঠাকুরীয়া বলেন, “তুলনামূলকভাবে, শেষ এক বা দেড় মাসে মিডিয়া কর্মীদের মৃত্যুহার হ্রাস করার ক্ষেত্রে ভারত উন্নতি প্রদর্শন করেছে। এই সময়ের মধ্যে মাত্র একজন মিডিয়া কর্মী (মারাঠি লিপিকার, নন্দকুমার সোনার ২৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন) করোনার শিকার হয়েছেন।” তিনি আরো বলেন, এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর মালায়লাম সাংবাদিক ডি বিজয়মোহন করোনা সংক্রান্ত জটিলতায় মৃত্যুবরণ করে ভারতের মিডিয়া কর্মীদের মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেন।
সূত্র: প্রেস এমব্লেম ক্যাম্পেইন