গত ১০ বছর ধরে মমতা নয়, নির্মমতা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। হলদিয়া থেকে ঝাঁজালো আক্রমণ নরেন্দ্র মোদির। তার কথায়, অনেক আশা নিয়ে বাংলায় পরিবর্তন এনেছিলেন মানুষ। কিন্তু পরিবর্তনের বদলে রাজ্যে বাম আমলের অন্ধকার দিনগুলোই আবার ফিরে এসেছে। সামনে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। বাংলা দখলের জন্য রাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। তবে এতদিন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু রোববার হলদি নদীর পাড় থেকে রাজনৈতিক প্রচার শুরু করে দিলেন তিনি। আর প্রথম দিনেই রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সভামঞ্চ থেকে বাংলায় বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলার জনতার মন ছুঁতে খাঁটি বাংলায় তুলে ধরলেন মেদিনীপুরের ইতিহাসও। এমনকী, বাজেটে বাংলার জন্য একাধিক বরাদ্দের কথাও ফের তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী।
পশ্চিমবঙ্গে, প্রথম রাজনৈতিক সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রশ্ন তুললেন, যথেষ্ট পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেন বাংলা এত পিছিয়ে? কেন এ রাজ্যের যুবক, যুবতীদের কাজের সন্ধানে বাইরের রাজ্যে যেতে হচ্ছে? রাজনীতির জন্যই এই পরিস্থিতি, এখানে উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ তার। সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলকে তোলাবাজ-সিন্ডিকেটের সরকার বলেও কটাক্ষ করেন মোদি। আমফানের ত্রাণ নিয়েও বাংলায় দুর্নীতি হয়েছে বলে সরব মোদি। প্রশ্ন করলেন আয়ুষ্মান ভারত, কিষাণনিধির মতো প্রকল্প কেন এ রাজ্যে কার্যকর করা হয়নি? সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, ভারতমাতার স্লোগান শুনলেও রেগে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদির কথায়, বাংলা যে পরিবর্তন পেয়েছে, তা আসলে বাম জমানার পুনর্জন্ম। দুর্নীতির পুনর্জন্ম। এটা আসল পরিবর্তন নয়। এবার বিজেপির হাত ধরে পরিবর্তন আসবে এই রাজ্যে।
একই সঙ্গে, একুশের লড়াইয়ে বাংলায় তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি এবং উলটোটাও সত্যি ,হলদিয়ার জনসভা থেকে তা স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এক নতুন অভিযোগ আনলেন, যা নিয়ে বেজায় খেপেছেন বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী মোদির মন্তব্য, তৃণমূলের সঙ্গেই এবার মূল লড়াই হবে। তবে ভুলবেন না, আরও দুই দল রয়েছে, বাম, কংগ্রেস, যারা তলে তলে গোপন বৈঠক করছে। বাম-কংগ্রেস-তৃণমূলের ম্যাচ ফিক্সিং চলছে। এদের থেকে সাবধান। এর আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসার পর বিভিন্ন জনসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী বাম-কংগ্রেস সমর্থকদের কাছে টানার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট অভিযোগ, বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল ম্যাচ ফিক্সিং করছে। দিল্লিতে গোপন বৈঠক হচ্ছে। তার এই মন্তব্য থেকেই বোঝা গেল বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে তৃণমূলকে মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে রণকৌশল সাজালেও বাম-কংগ্রেসকে নিতান্ত কম গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি।
অন্যদিকে ভারতের চা শিল্পের বিরুদ্ধে চক্রান্ত নিয়ে বিস্ফোরক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রোববার, পশ্চিমবঙ্গে আসার আগেই অসমে যান তিনি। তাকে স্বাগত জানাতে প্রদীপের আলোয় সেজে উঠেছিল অসম। অসমের শান্তিপুর জেলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, ভারতের বাসিন্দা নন, এমন কিছু মানুষ বাইরে থেকে দেশের বদনাম করার চেষ্টা করছেন। অসমের শান্তিপুর জেলায় নরেন্দ্র মোদি জানান, কয়েকদিন ধরেই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। বিশেষত, ভারতের চা শিল্পকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছেন কয়েকজন। এই বিষয়ে বেশ কিছু নথিরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল, যারা এই চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, তাদের থেকে জবাব চাইবেন ভারতের সমস্ত চা বাগানের শ্রমিক-কর্মীরা। ধেকিয়াজুলির শান্তিপুরে, অসোম মালা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই প্রকল্পের ফলে রাজ্যের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়াও বিশ্বনাথ ও চাড়াইদেওতে দুটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জানান,বিগত দু’বছরে অসমের স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।