আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে সামরিক জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে একদিনেই এ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিন আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। রোববার দেশটির ইয়াঙ্গুন, দাওয়েই ও মান্দালয় শহরে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মাউং বো টুইটারে বলেছেন, ‘মিয়ানমার যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে গেছে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জানায়, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়ে প্রাণঘাতী শক্তি ও কম প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করেছে। এতে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য অনুযায়ী অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, দেশজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়ার পর রোববার সকাল থেকে বড় বড় শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টে জড়ো হন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। এতে যোগ দেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ স্টান গ্রেনেড, কাঁদুনে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।
দাওয়েই শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জ হেইন নামে একজন উদ্ধারকর্মী। তিনি জানান, সেসময় রাবার বুলেটে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ স্টান গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করছে এবং গুলি ছুড়ছে। তিন নিউ য়ি নামের একজন নারী শিক্ষক মারা যান। দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইয়াঙ্গুনে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
বিদ্যালয় শিক্ষক অ্যামি কিয়াও বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভে নামামাত্র পুলিশ গুলি চালানো শুরু করে। তারা সতর্ক করতে টু শব্দটিও উচ্চারণ করেনি। গুলিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় কিছু বিক্ষোভকারী আশপাশে বাড়িঘরে আশ্রয় নেন।’
এর আগে মিয়ানমারের রাজনীতিবিদ কিয়া মিন হিটেক রয়টার্সকে জানান, দাউই শহরের বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে পুলিশ প্রথম একজনকে হত্যা করেছে। এরপর আরও দুইজনকে গুলি করে মেরেছে। এ ঘটনায় ১২ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
এছাড়া দেশটির বাগো শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত দুই জন নিহত হয়েছেন বলে একটি দাতব্য সংস্থার বরাতে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ড্যামোক্রেসি (এনএলডি) নেতা অং সান সু চিসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে তাদের মুক্তির দাবিতে দেশটিতে সামরিক জান্তাবিরোধী আন্দোলন চলছে।