1. shahinit.mail@gmail.com : dhaka24 : ঢাকা টোয়েন্টিফোর
  2. arifturag@gmail.com : ঢাকা টোয়েন্টিফোর : ঢাকা টোয়েন্টিফোর ডটনেট
July 16, 2025, 9:12 pm

সাম‌নে ঈদ, লকডাউনে ‘দি‌শেহারা’ ব্যবসায়ীরা

News desk | Dhaka24-
  • Publish | Wednesday, April 21, 2021,
  • 163 View

দিন দিন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রতি‌দিনই মৃত‌্যুর মি‌ছি দীর্ঘ হচ্ছে। ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাওয়া সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার দফায় দফায় লকডাউন জারি করলেও জনস‌চেতনতার চিত্র খুবই নাজুক। কোথাও কোনও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই, মাস্ক ছাড়াই যত্রযত্র চলাফেরা করছে মানুষ।

সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। মাঝে ১২ ও ১৩ এপ্রিলকেও প্রথম দফা লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া একসপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আরও একসপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। আর এতেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ব্যবসায়ীদের কপালে।

ব‌্যবসায়ীরা বলছেন, সামনে ঈদ। সারা বছর কেনাকাটা যাই হোক, ঈদের সময় তা পুষিয়ে নেয়া যায়। গত একটা বছর করোনার কারণে তেমন মুনাফা হয়নি। সামনে ঈদ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। ঈদ ঘিরে ভালো বেচাবিক্রির আশা ছিল তাদের। কিন্তু চলমান টানা লকডাউনে ব্যবসায় ধস নামার আশঙ্কা এখন তাদের চোখেমুখে।

গু‌লিস্থান হকার মা‌র্কেটের ব‌্যবসায়ী র‌বিউল ইসলাম মোবাইল ফো‌নে ব‌লেন, ‘সারা বছর তেমন বি‌ক্রি কর‌তে পা‌রি নাই। ভে‌বে‌ছিলাম সাম‌নে ঈদ, সারা বছ‌রের ক্ষতি পুষি‌য়ে নে‌বো। কিন্তু ম‌নে হ‌চ্ছে ঈদ পর্যন্ত লকডাউন বহাল রাখবে সরকার। আর য‌দি ঈদ পর্যন্ত লকডাউন চলে তাহ‌লে আমা‌দের ব‌্যবসা গুটিয়ে নেয়ার উপক্রম হবে। বেচাবি‌ক্রি না হ‌লে ব‌্যবসা কর‌বো কেম‌নে?’

তি‌নি ব‌লেন, ‘ঈদ ঘিরে যা কি‌নে রাখ‌ছিলাম সব প‌রে আছে,‌ কিছুই বি‌ক্রি হয় নাই । ঈদের দি‌কে তাকিয়ে ‌ছিলাম, কিন্তু তাও আর হয়তো হ‌বে না।’

ঢাকা ট্রেট সেন্টার (সা‌বেক বঙ্গ বাজার মা‌র্কে‌টের) ব‌্যবসায়ী হাসান ব‌লেন, ‘গত লকডাউনে মা‌র্কেট খু‌লে দি‌য়ে‌ছি‌লো, ভে‌বে‌ছিলাম কিছু তো বি‌ক্রি হ‌বে। তা‌তেই কোনও রকম ক‌রে এ বছর চ‌লে যা‌বে। কিন্তু আবার লকডাউন দি‌লো, মা‌র্কেট সব বন্ধ। আমা‌দের বেচাবি‌ক্রিও বন্ধ। এভা‌বে চল‌তে থাক‌লে আমা‌দের পে‌টে ভাত জোটা‌তে পার‌বো না। না‌ খে‌য়ে মর‌তে হ‌বে।’ তি‌নি ঈদের আগে লকডাউন শিথিলের দাবি জানান।

জা‌কের মা‌র্কেটের দোকান মা‌লিক স‌মি‌তির সাধারণ সম্পাদক ফি‌রোজ আহ‌মেদ ব‌লেন, ‘ব‌্যবসা-বা‌ণিজ‌্য সব বন্ধ। এভা‌বে চল‌তে থাক‌লে ব‌্যবসায়ীরা প‌থে ব‌সে যা‌বে। মা‌র্কে‌টের ব‌্যবসাহী‌দের বাচা‌নোর জন‌্য সরকা‌রের একটা বিকপ্ল উপায় বের কথা উচিত।’

তি‌নি ব‌লেন, ‘গত বছর ব‌্যবসায়ীরা বড় ধরনের লস ক‌রে‌ছে। এবছর সেটা পু‌ষি‌য়ে নেয়ার চিন্তা ছি‌লো। ভে‌বে‌ছিলাম এই ঈদে ভা‌লো বেচাবি‌ক্রি হ‌বে, কিন্তু এবছরও লকডাউন চলছে। ঈদের বেচাবিক্রি করতে না পারলে সবাই প‌থে বসসে যাবে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঋণ করে ঈদের জন্য কোটি টাকার জামা-কাপড় বানিয়ে রেখেছি। লকডাউনের কারণে সারা দেশের খুচরা ব্যবসায়ীরা সেসব না নিতে পারলে এই কাপড় দিয়ে আমরা কী করবো? গত বছরও মার্কেট বন্ধ থাকার কারণে দোকানের কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দিতে পারিনি। এবারও দিতে পারবো কি না, জানি না। ওরা কিভাবে বাঁচবে, আমরাও বা বাঁচবো কীভাবে?’

এসব মা‌র্কে‌টের কর্মচারীরা জানান, প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা ঈদের আগে তাদের বেতন-বোনাস মিটিয়ে দেন। গত বছর করোনার জন্য অ‌র্ধেক টাকা দি‌য়ে‌ছি‌লো । খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছে। এবারও যদি লকডাউনের কারণ দেখিয়ে মালিকপক্ষ তাদের পাওনা টাকা না দেয়, তাহলে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যেতে হবে। তারা বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা না গেলেও খেতে না পেরেই মারা যাবো।’

বি‌শেষজ্ঞরা বল‌ছেন, লকডাউনে সাধারণ মানুষ, ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। এসব পেশার মানুষেরা খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব মানুষদের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। সত্যিকার অভাবী এবং অসহায় মানুষেরা যাতে প্রণোদনা সঠিকভাবে পায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এসব মানুষের কাছে এখন মূল বিষয় হচ্ছে বেঁচে থাকা। তাই এরা সবাই বাঁচার জন্য দৌড়াচ্ছে।

শুধু পাইাকারি ব‌্যবসায়ীরা হতাশার ম‌ধ্যে তা নয়, এক অবস্থা খুচরা ব‌্যবসায়ীদেরও। তারাও ঈদে ভালো ব্যবসার অপেক্ষা ছিল। কিন্তু ঈদ পর্যন্ত লকডাউন থাক‌লে তা‌দেরও সব হিসাব নিকাশ উল্টে যা‌বে।

রাজধানীর শ‌নিরআখরার ক‌য়েকজন খুচরা ব‌্যবসায়ী জানান, ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। সবকিছুই নির্ভর করে ব্যবসার ওপর। ব্যবসা নাই বলে এসব খরচও দিতে পারছি না। অনেকে এরই মধ্যে বিকল্প চিন্তা করছে খরচ কমানোর জন্য। বাসা ছেড়ে দিয়েছে, শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রপআউট করে পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। ভে‌বে‌ছিলাম সাম‌নের ঈদে সব ঠিক হ‌য়ে যা‌বে, কিন্তু ম‌নে হ‌চ্ছে ব‌্যবসা গু‌টি‌য়ে গ্রা‌মে ফিরে যে‌তে হ‌বে।’

শ‌নিরআখরার খুচরা ব‌্যবসাহী আল আমিন ব‌লেন, ‘লকডাউনের কারণে দোকান খুল‌তে পা‌রিনা। যদিও লুকিয়ে টুকটাক খুলছি, তাতেও জরিমানার ভয় থাকে। এম‌নিতেই বি‌ক্রি নাই তার উপর য‌দি জ‌রিমানা দি‌তে হয় সেই ভ‌য়ে দোকান খু‌লি না। কিন্তু পেট তো চালা‌তে হ‌বে। প্রতিমা‌সে দোকান ভাড়া বা‌ড়ি ভাড়াও দি‌তে হয়। ব্যবসাই যদি না থাকে তাহলে এসব চালাবো কী করে?’

More news

© All rights reserved | 2016 dhaka24.net by |

Theme Customized BY WooHostBD