সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আকাশে ভারী মেঘের সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে বায়ু চাপের আধিক্য রয়েছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হওয়া বইছে। গত কয়েক দিনের মতো গতকালও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের লোকেরা আছেন ভূমিধসের আতঙ্কে। এই বৃষ্টির আগেই বেশ কিছু অঞ্চলের নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের শিকার হয়েছে। বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলায় মেঘনাসহ অন্যান্য নদী ভাঙনরোধ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এদিকে গতকাল ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদী বন্দরগুলোতে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু এখন অনেক সক্রিয়, আর বায়ু চাপের আধিক্যও বেশি থাকায় ভারী বৃষ্টির সঙ্গে কোথাও কোথাও দমকা হাওয়া বইবে। এ কারণে নদী বন্দরগুলোতে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। আজ এবং আগামীকাল এই আবহাওয়াই বিরাজ করবে। পরশু কিছুটা কমতে পারে। এরপর আবার হবে। বর্ষায় প্রায়ই এমন আবহাওয়া থাকবে।’
ভারী বৃষ্টির সতর্কতায় বলা হয়, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা আছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সীতাকুণ্ডে ১২৫ মিলিমিটার। এছাড়া সন্দ্বীপে ১০৬, চট্টগ্রামে ৯২, টেকনাফে ৮১; ভোলা, চাঁদপুর ও মাইজদীকোটে ৭৪, ফরিদপুরে ৬৩, ফেনীতে ৫৯, ময়মনসিংহে ৪৯, খুলনায় ৪৭, যশোরে ৪৬, হাতিয়ায় ৪৫, বরিশালে ৪০, পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৩
ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধসের শঙ্কা
ঢাকায় ৩৮, টাঙ্গাইলে ৩৫, সাতক্ষীরায় ও গোপালগঞ্জে ৩৩, পটুয়াখালীতে ২২, সিলেটে ২১; তাড়াশ, কক্সবাজার ও নেত্রকোনায় ২০, মাদারীপুরে ১৯; চুয়াডাঙ্গা, কুমারখালী ও নিকলিতে ১৬, কুমিল্লায় ১৪; দিনাজপুর, খেপুপাড়া, সৈয়দপুর ও শ্রীমঙ্গলে ১২, রাঙ্গামাটিতে ১১; রাজশাহী, ঈশ্বরদী ও বগুড়ায় ৮, মোংলা ও বদলগাছিতে ৬, রংপুরে ৪, রাজারহাটে ৩ এবং ডিমলায় ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে নদী বন্দরগুলোকে দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য এসব এলাকার বন্দরগুলোকে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এ বার্তায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমি বায়ু অক্ষের বর্ধিতাংশ পূর্ব-উত্তর প্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় আছে। এসবের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলাবাসীর দাবি
বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলায় মেঘনাসহ অন্যান্য নদী ভাঙনরোধ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা উপজেলায় মেঘনাসহ অন্যান্য নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব দাবি জানিয়েছেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মেহেদীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া, চাঁনপুর, রুকুন্দী সাদেকপুর, শ্রীপুর, চর গোপালপুর, জাঙ্গালিয়া, দরিরচর, খাজুরিয়া ও ভাসানচর ইউনিয়নসমূহ এবং হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া, হরিনাথপুর, ধূপখোলা, হিজলা গৌরবদী, ইউনিয়নসমূহ প্রধান নদী মেঘনা ও উপ নদী ছাড়াও তেঁতুলিয়া, গজারিয়া, কালাবদর ও লতা নদী ব্যাপক নদী-ভাঙনের শিকার। এসব এলাকার বসবাসকারীরা আজ রিক্ত নিঃস্ব ছিন্নমূল হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বিগত ৩টি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে স্থানীয় ঘর-বাড়ি, পশু-পাখি, ফসলহানিসহ রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধর্মীয় উপাসনালয় হাট-বাজার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বক্তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামী ১/২টি বন্যায় হিজলা উপজেলা সদরের অবকাঠামোগুলোও নদী-ভাঙনের কবলে পড়তে পারে।