করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় ঢাকার চারপাশের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ সাত জেলায় কঠোর লকডাউন (বিধিনিষেধ) শুরু হয়েছে। রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জও আছে এই লকডাউনের আওতায়। এ জন্য জনসাধারণের চলাচলসহ সার্বিক কার্যাবলীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত এই লকডাউন বহাল থাকবে। এতে ঢাকা প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
নির্দেশনা অনুসারে, ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যাবে না এবং ঢাকায় প্রবেশও করবে না। ঢাকা থেকে সাত জেলায় আগামী নয় দিন কোনো ট্রেন থামবে না, কোনো নৌযানও ভিড়বে না। অর্থাৎ সারাদেশের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন থাকবে রাজধানী।
এর আগে সোমবার (২১ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে কয়েক দিন ধরে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ (সোমবার) সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ঢাকাকে আমরা একটু কাট-অব (বিচ্ছিন্ন) রাখতে চাই অন্য জেলার সঙ্গে। সেজন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা সাত জেলা লকডাউনের আওতায় এনেছি।’
সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে লকডাউন আগামী ৩০ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ সময় ঢাকার চারপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ লকডাউনে থাকছে। এছাড়া রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা লকডাউনে থাকছে। ঢাকা থেকে গণপরিবহন চলাচলের বেশির ভাগ রুট নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ জেলার সঙ্গে। লকডাউনে এসব রুটে ঢাকা থেকে বাস চলাচল করবে না।
এই সাত জেলায় কী কী বন্ধ থাকছে প্রশ্ন করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সব বন্ধ থাকবে। মানুষও যাতায়াত করতে পারবে না। শুধু মালবাহী ট্রাক এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া। জেলাগুলো ব্লকড থাকবে, কেউ ঢুকতে পারবে না। এসব জেলায় সরকারি অফিসগুলো কীভাবে চলবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছুই বন্ধ থাকবে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর বাইরে যদি কোনো জেলা লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, তাহলে জেলা প্রশাসন থেকে লকডাউন দিতে পারবে।
ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই জেলাগুলোর মধ্যে যেগুলোতে ট্রেন চলাচল করে, সেখানে বন্ধ থাকবে।
সোমবার রাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) জানিয়েছে, কঠোর লকডাউন দেয়া ৭টি জেলার মধ্যে ছাড়াও ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, সরকার যে সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে, তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী জেলায় রেল যোগাযোগ রয়েছে। এই তিনটি জেলায় ট্রেনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে। এসব জেলায় ট্রেন থামবে না। গাজীপুরে ক্রসিংয়ে ট্রেন থামলেও যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে না। বাকি চারটি জেলা-মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জে ট্রেন যোগাযোগ নেই।
সীমিত পরিসরে চলছে ট্রেন
বাস বন্ধ হলেও সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। তবে যেসব এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সেসব জেলায় ট্রেন থামবে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা থেকে গাজীপুরের টঙ্গী ও জয়দেবপুর হয়ে যে সব আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে সেগুলো ওই স্টেশনে থামছে না। নারায়ণগঞ্জ হয়ে চলে শুধু মেইল ও লোকাল ট্রেন। করোনার কারণে এসব ট্রেন বন্ধ রয়েছে।
নৌপথেও সারাদেশে চলাচল বন্ধ
প্রথমে নির্দিষ্ট সাত জেলার কথা বললেও পরবর্তীতে সারাদেশের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)৷ ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএয়ের পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পণ্য পরিবহন এবং জরুরি সেবা দেওয়া নৌযানের ক্ষেত্রে এ আদেশ কার্যকর হবে না।
আকাশপথ খোলা
লকডাইনের নতুন এ নির্দেশনায় অবশ্য আকাশপথ খোলা রয়েছে। যেহেতু লকডাউন জারি করা কোনো জেলাতে বিমানবন্দর নেই, সেহেতু ফ্লাইট পরিচালনা করতে কোনো সমস্যা নেই৷ মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশপথ খোলা থাকায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, যশোর ও নীলফামারীর সৈয়দপুরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, লকডাউন চলাকালে সার্বিক কার্যাবলি চলাচল (জনসাধারণের চলাচলসহ) সকাল ৬টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময় শুধু আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (নদীবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। গত ১৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়।