টমেটো একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও এখন সারা বছর পাওয়া যায়। কাঁচা কিংবা পাকা দুভাবে টমেটো খাওয়া যায়। সালাদ হিসেবে ও রান্না টমেটো খুবই সুস্বাদু। টমেটোতে ভিটামিন এ কে, বি১, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭ ও ভিটামিন সিসহ নানা প্রাকৃতিক ভিটামিন পাওয়া যায়।
এ ছাড়া এতে ফোলেট, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোলিন, কপার এবং ফসফরাসের মতো খনিজও থাকে।
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই সবজিটি এখনকার সময়ে এতো জনপ্রিয় হলেও ২০০ বছর আগের চিত্রটা এমন ছিলো না। তখন মনে করা হত টমেটো অচ্ছুত্। একে ছুঁলেও পাপ। তাই খাওয়া তো দূরের কথা, একে ঘরের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতেই দিতেন না সেকালের মানুষ।
টমেটো খেলে পাপ হয়। ধর্মপ্রাণ মানুষদের কাছে টমেটো ছিল মুক্তির পথের অন্তরায়। কেউ কেউ আবার টমেটো যে আদৌ খাওয়ার জিনিস তা-ই মনে করতেন না।
ভাবতেন এবুঝি ডেকোরেশন প্ল্যান্ট। আবার কেউ ভাবতেন এ এক ধরনের বিষ-ফল। বলা হতো ‘Poison Apple’।
টমেটো নিয়ে হাজারো সংশয় ছিল। যার অধিকাংশই খণ্ডন করা হয় ১৮২০ সাল নাগাদ। ১৮২০ সালের ২৮ টমেটোকে খাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ দিনেই ঘোষণা করা হয় টমেটো বিষাক্ত নয়। তারিখটা নিয়ে একটু সংশয় আছে। ২০০ বছরের ব্যাপার তো। কেউ কেউ বলে ১৮২০ সাল ঠিকই, তবে তারিখটা ২৮ জুন নয়, ২৬ সেপ্টেম্বর যেদিন প্রমাণিত হয় টমেটো বিষাক্ত নয়।
লন্ডনের বিজ্ঞানী কর্নেল জনসন, এদিন প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, এটি non-poisonou বা বিষ মুক্ত, অতএব খাওয়া নিরাপদ। যদিও এর মানে এই নয় যে, ঠিক তার পরদিন থেকেই রাতারাতি মানুষ টমেটো খেতে শুরু করে দেন। তখনও একে নিয়ে বহু সংশয়, দ্বিধা, প্রশ্ন, বাধা, সংস্কার ছিল।
তবে প্রাচীন কালে সর্বত্রই যে এমনটা ছিল তা নয়। অ্যাজটেকস সভ্যতায় টমেটোর ব্যবহার ছিল বলেই জানা যায়। তা ছাড়া ধনী ইউরোপিয়ানদের মধ্যেও এর প্রচলন ছিল। তবে সাধারণের কাছে খাদ্য হিসেবে গ্রাহ্য হতে এর অনেক সময় লেগেছিল।
মেসোমেরিকাতে টমেটোর চল বেশি ছিলো। টমেটো শব্দটি নাকি এসেছে উটো-আজটেকান নাহুয়াতল শব্দ ‘টমেটাল’ থেকে! যার অর্থ– ‘ফোলা ফল’।
তবে মেসোমেরিকা থেকেই এটি উদগত হয়নি। টমেটোর বীজ নাকি এসেছিল দক্ষিণ ইউরোপ থেকে। তবে টমেটোর প্রকৃত উত্সস্থল হল স্পেন বা পর্তুগাল।
মোটামুটি ১৭০০ সালের পর থেকেই টমেটো নিয়ে গুজবের ছড়াছড়ি ও বাড়াবাড়ি। কোনও একবার কোনও এক ধনীর ডাইনিং হলে খাওয়ার সময়ে টমেটোর কাথ্ব নাকি টেবিলের কাপড়ের উপর উল্টে পড়ে। কিছুতেই সে দাগ ওঠে না। ব্যস! তার পর থেকেই লোকমুখে গুজবের শুরু!
টমেটো নিয়ে সংশয় আজও মিটেছে নাকি? আজও তো মানুষ স্থির করে বলতে পারেন না, এটি সবজি না ফল! বটানিস্টদের দ্বারস্থ হতে হয়!