শীত ও তুষারপাতে অভ্যস্ত দেশ কানাডায় অভূতপূর্ব তাপমাত্রা ও তীব্র গরমে মৃতের সংখ্যা ১৩০ ছাড়িয়েছে। এর আগে প্রাথমিক ভাবে এই সংখ্যা ৬৯ বলে জানানো হয়েছিল।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার থেকে ওই অঞ্চলে প্রায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই প্রবীণ। আর তাদের মৃত্যুর পেছনে ভয়ঙ্কর তাপদাহের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরে অবশ্য এ সংখ্যা বেড়ে ১৩০ জনে দাড়িয়েছে বলে দাবি সেদেশের মিডিয়াগুলোর।
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যাঙ্কুভার শহরের পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার থেকে তারা ১৩০ জনেরও বেশি মানুষের ‘হঠাৎ মৃত্যুর’ খবর পেয়েছে। মৃতদের বেশিরভাগই বয়স্ক এবং স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে চলমান তীব্র গরমই দায়ী বলে মনে করছেন তারা।
বিবিসির খবর অনুসারে, গত মঙ্গলবার কানাডায় টানা তৃতীয়দিনের মতো দেশটির সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড হয়েছে। এদিন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার লাইটন এলাকায় তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৪৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা কানাডীয়রা আগে কখনোই দেখেননি।
এদিকে কানাডার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে মঙ্গলবার। এদিন দেশটির ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার লিটনে তাপমাত্রা ছিল ৪৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা নিয়ে টানা তৃতীয় দিন দেশটিতে তাপমাত্র নতুন রেকর্ড করলো।
এর আগে গত রোববার দেশটির ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এক গ্রামের তাপমাত্রা ছিল ৪৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেদিন দেশটির ইতিহাসে এটিই ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
বিবিসি জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের আগপর্যন্ত কানাডার তাপমাত্রা কখনোই ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়নি। আর টানা ৩ দিন ধরে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড করায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
এই পরিস্থিতিতে কিছুটা অসহায় হয়েই একে-অপরের খোঁজ রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের কর্পোরাল মাইক কালনজ। তিনি বলেছেন, ‘আপনার প্রতিবেশিদের খোঁজ-খবর রাখুন, পরিবারের সদস্যদের খোঁজ রাখুন। এমনকি আপনি যেসব বয়স্ক মানুষকে জানেন, তাদেরও খোঁজ নিন।
পুলিশ জানিয়েছে, তীব্র গরমের কারণে ভ্যাঙ্কুভার শহরে ৬৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া বার্নাবি শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কমপক্ষে ৩৪ জন এবং সুরে এলাকায় ৩৮ জন ‘হঠাৎ করে’ মারা গেছেন।
পুলিশ সার্জেন্ট স্টিভ অ্যাডিসন বলছেন, ভ্যাঙ্কুভারে কখনোই এতোটা গরম পড়েনি। কেবল এই গরমের কারণেই অনেক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
কানাডার স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘এনভায়রনমেন্ট কানাডা’ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও অ্যালবার্টা প্রদেশ এবং সাসকেচুয়ান, নর্থওয়েস্টার্ন টেরিটোরিস এবং ইউকন প্রদেশের কিছু এলাকায় অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য সতর্কতা জারি করেছে।
এনভায়রনমেন্ট কানাডা’র সিনিয়র জলবায়ুবিদ ডেভিড ফিলিপস বলছেন, আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শীতপ্রবণ দেশ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বরফ পড়ে, এমন একটি দেশ। এখানে মাঝেমধ্যে শৈত্যপ্রবাহ বা তুষার ঝড় হয়ে থাকে, কিন্তু এরকম উষ্ণ তাপমাত্রা এখানে প্রায় কখনোই পাওয়া যায় না।
দুবাইয়ের তাপমাত্রাও আমাদের কয়েকটি এলাকার চেয়ে কম উষ্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।